রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্রদের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ জনকে। তারা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুটি মামলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে, অন্যটি করেছে সংঘর্ষে নিহত যুবক নাহিদ হোসেনের পরিবার।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জমান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মামলা তিনটি করা হয়। নিহত নাহিদ হোসেনের চাচা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। আর পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন নাহিদ হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন পুলিশের পরিদর্শক ইয়ামিন কবীর। এতে ঢাকা কলেজের অজ্ঞাতপরিচয় ৬০০ ছাত্র এবং নিউ মার্কেট এলাকার অজ্ঞাতনামা ৩০০ ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলায় সহিংসতায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে ১২ ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে অ্যাডভোকেট মকবুল, আমীর হোসেন আলমগীর, হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, মিজান ব্যাপারী ও জাপানী ফারুকের নাম।
আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পুলিশের করা দ্বিতীয় মামলাটিতে ঢাকা কলেজের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে।
তিন মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
প্রেক্ষাপট
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে।
সোমবার মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও উত্তপ্ত ছিল নিউ মার্কেট এলাকা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
১০ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সেই সময় বন্ধ হয়ে যায় নিউ মার্কেট এলাকার সব দোকানপাট ও সড়কে যান চলাচল। বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকা কলেজ ও এর ছাত্রাবাসগুলো।
সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে আহত দোকান কর্মচারী মো. মোরসালিনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টা ৩৬ মিনিটে মৃত্যু হয় তার।
এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাতের সঙ্গে ঢাকা কলেজের তিন ছাত্রলীগ কর্মীর সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানে সোমবার ইফতারের আগে টেবিল পাতা নিয়ে দুই কর্মচারীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক কর্মচারীর ডাকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের তিন কর্মীর নেতৃত্বে কিছু ছাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তারা মারধরের শিকার হয়ে কলেজে খবর দিলে ছাত্ররা মার্কেটে হামলা চালান।
সোমবার মধ্যরাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সে রেশে রাতভর উত্তেজনা ছিল রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায়।
মঙ্গলবার সকালে আবারও পথে নেমে আসেন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।
সংঘর্ষের জেরে দুই দিনের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান খোলা শুরু হয়েছে।