সাড়ে ৩ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ঢাকা কলেজের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের বিষয়টি ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে মীমাংসা করা হয়েছে।
বৈঠকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউ মার্কেটের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরির ভেতরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এমন তথ্য জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
এর আগে ঢাকা কলেজের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি শুরু হয়। চলে রাত ৪টা পর্যন্ত।
বৈঠকে ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের প্রতিনিধি, দোকান মালিক সমিতির নিউ মার্কেট এলাকার প্রতিনিধি ছাড়াও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের- ডিবি যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমসহ ঢাকা কলেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার গভীর রাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরির ভেতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের প্রতিনিধি ও দোকান মালিক সমিতির নিউ মার্কেট এলাকার প্রতিনিধি ছাড়াও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের-ডিবি যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমসহ ঢাকা কলেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ছবি: নিউজবাংলা
বৈঠক শেষে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা আশা করছি তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। বৈঠকে আমরা সবাই একমত হয়েছি, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। অনেকেই এটার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে। যারা সুযোগ সন্ধানী তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের দাবিদাওয়ার অনেকাংশই পূরণ হয়েছে। ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আগামী দিনে উভয় পক্ষই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে বলে আমরা সব পক্ষ থেকেই আশ্বাস পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে দোকান খুলে দেয়া হবে। পাশাপাশি ছাত্র যারা আছে তাদের ছুটি ঘোষণা হয়েছে। ছাত্রদের যারা ছুটিতে বাড়ি যাবে, অনেকের পরীক্ষা আছে। এসব বিষয়ে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে।
‘ছাত্রদের বিষয়টি আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমরা বলছি, আগামীকাল থেকে ইনশাআল্লাহ এই এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।’
ঢাকা কলেজ খোলা থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কথা। ২১ এপ্রিল থেকে পূর্বঘোষিত ঈদের ছুটি ৫ মে পর্যন্ত।’
এ ক্ষেত্রে কলেজের আবাসিক হল খোলা থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
গঠন করা হবে মনিটরিং শেল
ব্রিফিংয়ে নেহাল আহমেদ জানান, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি মনিটরিং সেল করব। যেখানে শিক্ষক-ছাত্র এবং দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা যেকোনো সংকটে সেই সেলের কাছে অভিযোগ জানাবেন। সেখান থেকেই আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রেক্ষাপট
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে।
সোমবার মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও উত্তপ্ত ছিল নিউ মার্কেট এলাকা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
১০ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সেই সময় বন্ধ হয়ে যায় নিউ মার্কেট এলাকার সব দোকানপাট ও সড়কে যান চলাচল। বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকা কলেজ ও এর ছাত্রাবাসগুলো।
সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে আহত দোকান কর্মচারী মো. মোরসালিনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টা ৩৬ মিনিটে মৃত্যু হয় তার।
এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাতের সঙ্গে ঢাকা কলেজের তিন ছাত্রলীগ কর্মীর সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানে সোমবার ইফতারের আগে টেবিল পাতা নিয়ে দুই কর্মচারীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক কর্মচারীর ডাকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের তিন কর্মীর নেতৃত্বে কিছু ছাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তারা মারধরের শিকার হয়ে কলেজে খবর দিলে ছাত্ররা মার্কেটে হামলা চালান।
সোমবার মধ্যরাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সে রেশে রাতভর উত্তেজনা ছিল রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায়।
মঙ্গলবার সকালে আবারও পথে নেমে আসেন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।