বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাংবাদিকদের পিটিয়েছে দুই পক্ষই

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৩১

মঙ্গলবার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে দিনভর সংঘর্ষের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পিটুনির শিকার হয়েছেন। হামলার শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলেও পেটানো হয়েছে তাদের। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর নিস্তার হয়নি, উল্টো তখন বলা হয়েছে, তাহলে আরও পেটানো হবে।

“গাড়ি থেকে নেমে আমরা লাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার ক্যামেরাম্যান আমাকে যখন ফোকাস করছিল, তখন চার-পাঁচজন লোক তাকে ঘিরে ধরল। বলছিল, ‘তু্ই ছবি তুললি কেন? আমদের ছবি তুললি কেন?”

মঙ্গলবার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দিনভর সংঘর্ষের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিত বলছিলেন নিউজবাংলাকে।

সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকদের, বিশেষ করে যাদের হাতে ক্যামেরা ছিল, তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে পেটানোর বিষয়টি স্পষ্ট। হামলার শিকার বেশির ভাগ গণমাধ্যমকর্মী ছিলেন ব্যবসায়ীদের দিকে। তবে যারা ছাত্রদের দিকে ছিলেন, তারাও হামলার শিকার হয়েছেন।

যেসব গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে সুমিতের ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তাকে ও তার ক্যামেরা পারসনকে দল বেঁধে ধাওয়া করছে একদল উত্তেজিত মানুষ, যারা ছিলেন ব্যবসায়ীদের পক্ষে।

রোড ডিভাইডারের লোহার পাত খুলে হাতে নেয় কেউ কেউ। এসব পাত দিয়েও পেটানো হতে থাকে সুমিত ও তার ক্যামেরা পারসনকে।

নিউজবাংলাকে এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘আমি ক্যামেরাম্যানকে বাঁচাতে গেলাম, কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাইনি। ওরা লাঠি আর রড লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে মেরে যাচ্ছিল।’

সুমিত এতটাই আঘাত পেয়েছেন যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তিনি রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হামলাকারীরা কি কিছু বলছিল? কেন তাদের এই ক্ষোভ- এমন প্রশ্নে দীপ্ত টিভির রিপোর্টার বলেন, ‘কারণ ছাড়াই মারছে। একজন যখন মারছে, তখন আরেকজন এসে যোগ দেয়। একসময় দেখলাম আমার গাল চুয়ে রক্ত পড়ছে; তখন কোনোভাবে পারছি না।’

মার থেকে রক্ষা পেতে মরিয়া সুমিত তখন হামলাকারীদের বলেন, ‘আমি রোজা, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করেন।’

কিন্তু হামলাকারীরা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। গাউছিয়া থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় দুজনকে।

সুমিত চিনেছেন, হামলাকারীরা ব্যবসায়ীদের পক্ষের। তিনি বলেন, ‘দোকানের কর্মচারী, এই শ্রেণিই বেশি মেরেছে। তবে দু-তিনজন ছিল, আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।’

আঘাত কতটা গুরুতর- এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নন সুমিত। বলেন, ‘গতকাল অবজারবেশনে ছিলাম। আজ কেবিনে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, সিটিস্ক্যানের পুরো রিপোর্ট এখনও আসেনি। পুরো রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। আরও এক দিন অবজারবেশনে রাখতে চায়।’

‘সাংবাদিক হইলে তো আরও মারমু’

বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার শাহেদ শফিক হামলার শিকার হয়েছেন সুমিতকে বাঁচাতে গিয়ে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেটের সামনে যে ফুট ওভারব্রিজ আছে, সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখলাম কিছু ব্যবসায়ী সুমিত ও তার ক্যামেরাপারসনকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তাদের থামাতে গেলাম। এরপর এলোপাতাড়িভাবে লাথি, কিল, ঘুষি শুরু হয়ে যায়।

“পরে মাথার ওপর হাত দিয়ে রাখছি। আমি বলছিলাম, এরা সাংবাদিক, এদের মাইরেন না। তখন তারা বলে, ‘সাংবাদিক হইলে তো আরও মারমু।’

“আমার গলায় তখন আমার প্রতিষ্ঠানের কার্ড ছিল। আরেকজন বলল, ‘এটাও সাংবাদিক। এটাকেও মার’।”

পিটিয়েছে ছাত্ররাও

আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল- আমিন রাজু জানিয়েছেন, তাকে পিটিয়েছে ছাত্ররা।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে একটা বাচ্চা ছেলেকে মারতেছে ওরা। আমি মোবাইল দিয়ে ভিডিও নিতেছি; ভিডিও শেষ করে চলে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে ধরেছে।

‘বললাম আমি সাংবাদিক। তারা বলল, ভিডিও করা যাবে না। এটা বলতে বলতে একটা ছেলে এসে মারধর শুরু করল।… থাপ্পড় দিছে, আমার চশমা পড়ে গেছে, মোবাইল হাতে থেকে পড়ে গেছে। তখন পেছন থেকে আমাকে আরও জোরে আঘাত করছে।’

কী দিয়ে মেরেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রামদার পেছনের অংশ দিয়ে বাড়ি দিয়েছে একজন।’

পিটুনির পর রাজুকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

রাজু বলেন, ‘শুধু আমার না, কাল ওরা প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ছিল। ওরা কাউকে ছবি তুলতে দিচ্ছিল না, ভিডিও করতে দিচ্ছিল না। চেষ্টা করলেই চড়-থাপ্পড় দিত, গালাগাল করত। অনেকের মোবাইল ফেলে দিছে।’

দুই পক্ষের ইটপাটকেলে আহতদের মধ্যে আছেন ইউএনবির ফটো জার্নালিস্ট রাকিবুল হাসান। ঢাকা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে যখন তিনি ছবি তুলছিলেন, তখন কলেজের ওপর থেকে ঢিল এসে লাগে তার ডান পায়ে।

সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল

এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক মাসুদ রায়হান পলাশ জানান, দুই পক্ষই গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওরা লক্ষ্য করে ইট মারছিল। যখনই ছবি তুলতে গেছি; তখনই কথা বলছি, তখনই ঠেলে বের করে দিত।’

পলাশ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

হামলার দায় নেবেন না ব্যবসায়ী নেতা

সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কী বলব বলেন তো। কাল মার্কেট বন্ধ। এখানে কর্মচারীরা কোথা থেকে আসে?’

সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনা তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘ফুটেজ দেখে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তবে এসব ঘটনার দায় নিতে চান না এই ব্যবসায়ী নেতা। বলেন, ‘আমি এর দায় নেব কেন? যে করছে সে নেবে। যে করেছে সে অন্যায় করেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর