ছেলে যাচ্ছিল কর্মস্থলে, সে না ব্যবসায়ীদের পক্ষে, না ছাত্রদের। কেন তার ওপর হামলা হবে, কারা এই কাজ করছে- এসব প্রশ্নের কূলকিনারা করতে পারছেন না নিউমার্কেটে সংঘর্ষে প্রাণ হারানো নাহিদ মিয়ার বাবা নাদিম হোসেন।
আগের রাতে প্রাণ হারানো নাহিদের ময়নাতদন্ত হয়েছে বুধবার। সে সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন নাদিম মিয়া।
ছলছল চোখে শুধু একবার এক দিকে, আরেকবার অন্য দিকে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছিলেন তিনি।
নাদিম বলেন, ‘ও (নাহিদ) কাজে যাইতেছিল। নিউ মার্কেট আইসা আটকা পড়লে লোকজন ঘিরে ধরে মারে। আমার ছেলে তো ব্যবসায়ীও না ছাত্রও না। ওরে কেন মারল। আমার ছেলের কী দোষ?’
ছেলে হারানোর এই ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, কোনো চাওয়া পাওয়া নেই তার। নেই মামলা মোকদ্দমার পকিল্পনাও।নাদিম বলেন, ‘আমি তো জানি না কে মারছে, কারা মারছে? কার কাছে বিচার চাইব?
‘কোনো মামলায় করতে চাই না। মামলা করলে পরে কী হয়ে কে জানে? আমরা নিরীহ মানুষ, কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।’
১৭ পেরিয়ে ১৮তে পা দেয়া নাহিদ তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। এই কিশোরের অবিকশিত কাঁধ বাবার সংসারের জোয়ালের কিছুটা ভার নিতে চেয়েছিল।
তিনি পড়াশুনা করেছিন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অভাবের কারণে আর আগাতে পারেননি। সংসারের চাকা ঘোরাতে ৮/৯ বছর বয়স থেকেই নামতে হয় কাজে।
শুরুতে নিউ সুপার মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। কিছুদিন কাজ করে সেটা ছেড়ে দেন। এরপর টুকটাক করছিলেন।
বছর তিনেক আগে নিউ এলিফেন্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের একটি কম্পিউটার সরঞ্জামের দোকানে ডেলিভারি ম্যানের কাজ নেন। করোনার ধাক্কায় সেই চাকরিটাও চলে যায়। এ বছর আবার একই প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যানের কাজ শুরু করেন।
মাল্টিপ্ল্যানে যাওয়ার উদ্দেশেই মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট সংলগ্ন এলাকার বাসা থেকে বের হন নাহিদ। হেঁটে নুরজাহান মার্কেটের সামনে হামলার শিকার হন তিনি।
ব্যবসায়ীদের অবস্থান ছিল এই মার্কেটের একটু আগে, আর অপর পাশে রাস্তায় ছিল ঢাকা কলেজের ছেলেরা। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নাহিদ কার জিঘাংসার শিকার, সেটি স্পষ্ট নয়।
রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই কিশোরকে নেয়া হয় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। রাতে তিনি মারা যান।
নিউমার্কেট থানার পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন কবির বলেন, ‘নুরজাহান মার্কেটের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন নাহিদ। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে।’
ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তার মৃত্যুর প্রধান কারণ। পুলিশ জানিয়েছে, তার মাথায় অন্তত চারটি আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে পেটানো হয়েছে।
দাফন হবে আজিমপুরে
ঢাকা মেডিক্যালে ময়নাতদন্ত শেষে নাহিদের মরদেহ পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। কামরাঙ্গীরচরে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করার কথা জানিয়েছে তার পরিবার।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে নাহিদ মিয়ার ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিন।