ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আগামী ৫ মে পর্যন্ত ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের এখন ধৈর্য রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন এই ছুটিতে ছাত্রদের বাড়ি গিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বলেছেন।
সংঘর্ষের পর বুধবার করণীয় নির্ধারণের বৈঠক শেষে অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন।
সংঘর্ষের জের ধরে ঢাকা কলেজ আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ এবং মঙ্গলবারের মধ্যেই ছাত্রদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পরে কর্তৃপক্ষ জানায়, ছাত্রাবাস ছাড়তে বুধবার পর্যন্ত ছাত্রদের সময় দেয়া হবে।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের বার্তা হলো, আমরা তাদের ধৈর্যধারণ করতে বলছি। রোজার দিন, সামনে ঈদ আছে। আমাদের কলেজ আজ থেকেই ছুটি হয়ে যাচ্ছে। তোমরা বাড়ি যাও, ঈদের আনন্দ উপভোগ করো।’
তিনি বলেন, ‘কলেজের হলগুলো বন্ধের যে সিদ্ধান্ত, সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের; যা শুধু এক্সিকিউড করেছি আমরা। ঢাকা কলেজের হল খোলা কিংবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিজে দিতে পারে না। এখন যদি হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। হল বন্ধ থাকবে সেই সিদ্ধান্তটাই সে ক্ষেত্রে বহাল আছে।’
হল বন্ধ হলে অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হবে- এ বিষয়টি শিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করছি। গতকালের মধ্যে তাদের হল খালি করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা তো হয়নি। ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। হল খোলার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা আশা করছি তারা আস্তে আস্তে হল ছেড়ে চলে যাবেন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের একজন ছাত্র আহত অবস্থায় এখন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। দুজন ছাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। আমাদের শিক্ষক, ডাক্তারসহ যাদের চিকিৎসা দিয়েছেন তাদের সংখ্যা শতাধিক। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক আহত হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছাকৃত তাদের ওপর হামলা করেছে এবং ক্যাম্পাসে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- এমন প্রশ্নে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করিনি। এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শিক্ষার্থীরা যে আহত হয়েছে, এ বিষয়টা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
ওই ঘটনার সঙ্গে ঢাকা কলেজের যদি কেউ যুক্ত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যদি হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। তদন্ত হয়তো মন্ত্রণালয় পর্যায়ে হবে। তারা যে সুপারিশ করবেন, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।’
এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আপনাদের মন্তব্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি ঢাকা কলেজের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে।’
শুধুই কি মন্ত্রণালয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মচারী, সরকারের যে নীতিনির্ধারণী আদেশ, আমাদের সেভাবে চলতে হয়।’
দোকান মালিক সমিতির অভিযোগ, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম। তারপর আমরা ঢিল খেয়ে ফেরত এসেছি। কিন্তু তাদের বক্তব্যে তো বাস্তবতা পরিবর্তন হয়ে যাবে না। আমরা তো এমনি এমনি রাস্তায় নামিনি।’
এ সময় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী নেতা যোগাযোগ করেনি বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কারও বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে একীভূত হয়ে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আপৎকালীন সময়ে আপনার যে ভূমিকা তাতে আপনার পদত্যাগ করা উচিত। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? অধ্যক্ষ বলেন, ‘তারা পদত্যাগ চাইতেই পারে। আমার আচরণ তাদের ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ হল বন্ধ করার স্বাক্ষর যেহেতু আমার, তারা মনে করে সিদ্ধান্ত আমার। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই।’