বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দালাল দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতারা

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৪২

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোনো আর্থিক লেনদেন হয় না। তদন্তের জন্য পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ টাকা নিয়েছে এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নিজের ও ছেলের পাসপোর্ট করতে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করেন মো. হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। সেখান থেকে তাকে কোর্ট বিল্ডিং এলাকার একটি কম্পিউটার কম্পোজ দোকানের ঠিকানা দেয়া হয়।

দোকানের মালিক ফারুক নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ফরম পূরণ, ব্যাংকের টাকা জমা ও অফিসের কাজ করেছেন তিনি। পুলিশের তদন্তের কাজও করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে এ কাজের জন্য তাকে কত টাকা দিতে হয়েছে জানতে চাইলে হোসেন বলেন, ‘কাজ সহজ করতে দিয়েছি কিছু।’

মো. হোসেনের মতো অনেককেই সহজে পাসপোর্ট পেতে বাধ্য হচ্ছেন দালালদের দারস্থ হতে। চিকিৎসা, উমরাহ, ভ্রমণ, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা কাজে পাসপোর্ট করতে প্রতিদিন এই কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা লোকজন দালালদের দারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যথায় তাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতা অনেকের অভিযোগ, কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদের কর্মচারী-কর্মকর্তারা দালাল চক্র দিয়ে অফিস খরচ ও পুলিশ তদন্তের নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। আর এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম পাসপোর্ট কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতা এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মোত্তালেব সরকারকে খাগড়াছড়ি বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দালাল চক্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের সত্যতা মেলে মঙ্গলবার দুপুরে পাসপোর্ট কার্যালয়ে। দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে দেখা যায়, অফিসের ১০২ নম্বর কক্ষে ডাটা এন্ট্রি, ছবি তোলা, আঙুল ও চোখের ছাপ নিচ্ছেন সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।

সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা রাখার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ডিএডি স্যার সুপারিশ দিয়ে যাদের পাঠাচ্ছেন তাদের আগে সেবা দিতে হচ্ছে। স্যারের নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই।’

দালাল চক্রের সক্রিয়তার প্রমাণ মেলে ওই কক্ষে। পাসপোর্ট অফিসের মনোনীত কম্পিউটার কম্পোজ ব্যবসায়ী ফারুক কয়েকজনকে নিয়ে এসেছেন ছবি তুলতে। এর পরের সব কাজ তিনিই করে দেবেন অর্থের বিনিময়ে।

এ সময় কথা হয় রামগড় থেকে পাসপোর্ট করতে আসা বিবি মরিয়ম জেলির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে পাসপোর্ট অফিসে এসেছি। সকাল গড়িয়ে এখন দুপুর হলেও কেউ কোনো কাজ করে দিচ্ছেন না। অথচ আমার পরে এসেও অনেকে কাজ করে নিয়ে যাচ্ছেন। অফিসের লোকজনই তাদের কাজ করে দিচ্ছেন।’

জাহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, ‘শাপলা চত্বরের একটি কম্পিউটার দোকান থেকে ফরম পূরণ করেছি। এটি জমা দেয়ার পর ভুল হয়েছে, তথ্য মিলছে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছে অফিসের লোকজন।

‘কীভাবে সমাধান করব জানতে চাইলে তাদের পরিচিত এক কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে দেখিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পাসপোর্ট করে দেয়ার কথা বলে তিনি আমার কাছ থেকে বাড়তি ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আর কোনো খরচ দিতে হবে না বলে জানান।’

অভিযোগের বিষয়ে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোনো আর্থিক লেনদেন হয় না। তদন্তের জন্য পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ টাকা নিয়েছে এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এর আগে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের হয়রানি নিয়ে অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সালের ২৫ জুন অভিযান চালায় দুদক রাঙ্গামাটি। তখন টাকার বিনিময়ে সেবা, গ্রাহক হয়রানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সেখানকার দুজন অস্থায়ী কর্মচারীকে বদলি ও তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক শওকত কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে অবহিত করে দুদক।

এ বিভাগের আরো খবর