ঈদ উদযাপন করতে কয়েক দিন পর শুরু হবে মানুষের বাড়ি ফেরা। বেড়ে যাবে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা। এ সময় থ্রি হুইলার গাড়ির কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা বা অটোটেম্পো এবং সব শ্রেণির অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
তবে নিষেধাজ্ঞা না মেনেই বরিশাল মহাসড়কে চলছে থ্রি হুইলার গাড়ি। বাস ও ট্রাকের চালকদের অভিযোগ, থ্রি হুইলার চলাচল নিয়ে অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে না।
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের বাসচালক শাহজালাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রার কারণে মহাসড়কে গাড়ি চালাইন্না কষ্ট হইয়া গ্যাছে। যহন তহন অ্যাক্সিডেন্ট হইতে আছে। মাহিন্দ্রা যারা চালায় ওগো পুলিশে ধরলে ১০০টার মধ্যে ৯০টাই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেহাইতে পারবে না।
‘তয় হেইডা বড় বিষয় না, বড় বিষয় হইতাছে এই মাহিন্দ্রাগুলাতো মহাসড়কে চলার অনুমতি পায় নাই। ওরা অবৈধভাবে পুলিশরে ম্যানেজ কইরা গাড়ি চালায়।’
ট্রাকের হেলপার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় দিনই উত্তরাঞ্চল দিয়া মালামাল নিয়া বরিশালে আই। বরিশালের রাস্তায় যে পরিমাণ থ্রি হুইলার চলে সেই রহম থ্রি হুইলার চলতে আর কোথাও দেহি না। মাহিন্দ্রা, টমটম, ভটভটি, ইজিবাইক যেহানে ইচ্ছা হেইহান দিয়া উইঠা যায়। সাইডে যাইতে কইলেও হোনে না। ওইয়ার (ওগুলোর) ড্রাইভাররা সিগন্যালই বোঝে না।
‘হেইরপর একটা দুর্ঘটনা ঘইটা গ্যালে দোষ হয় ট্রাকের। মাইনসে কয় ড্রাইভারে গাঁজা খাইয়া গাড়ি চালায়। হাইওয়েতে এসব থ্রি হুইলার বন্ধ করা উচিত। সামনে ঈদ আইতেছে। পুলিশ যদি একটু সৎ হইত তাইলে মহাসড়ক দিয়া এগুলা চলতে পারত না। হেভি স্পিডের গাড়ির সামনে যদি একটা স্লো স্পিডের গাড়ি হঠাৎ কইরা আইয়া পড়ে, হেই সময় কী করার?’
বাসচালক শমসের আলীর অভিযোগ, থ্রি হুইলারের কারণে তিনি আর আগের গতিতে বাস চালাতে পারেন না।
তিনি বলেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় হইছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাড়ি চালাই। আগে যে স্পিডে গাড়ি চালাইছি, সেই স্পিডে এখন আর চালাইতে পারি না। অলিগলি দিয়া হুটহাট ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা মহাসড়কে উইঠা যায়। ঈদের ছুটিতে সড়কে যানবাহন প্রচুর বাড়বে। এর মধ্যে এই গাড়িগুলাও চলবে। তারপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কেউ নিব না।
‘এই থ্রি হুইলারগুলা হইছে ডিস্টার্ব, মারণফাঁদ। পাবলিকও বোঝে না যে জীবনের ঝুঁকি নিয়া তারা এই গাড়িগুলায় চড়তেসে। পুলিশ সবই জানে, কিন্তু কিছুই কয় না। পুলিশরে ম্যানেজ কইরা এইসব করা হয়। আবার পুলিশ থ্রি হুইলারগুলা রিকুইজিশনে নিয়ে শহরের ভেতরে ডিউটি করে। তাই এরা বিশেষ ছাড় পায়।’
শমসের আরও বলেন, ‘পুলিশ যদি মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে তাইলে থ্রি হুইলারের মহাসড়কে ওঠা ঠেকাইতে পারে। এগুলা বরিশাল থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত পুরা মহাসড়ক ধইরা চলে। আমাগো দাবি, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা কইরা যেন মহাসড়ক থেকে থ্রি হুইলারগুলা সরাইয়া ফেলা হয়।’
জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘থ্রি হুইলারগুলো যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ব্রেক করে দাঁড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে এরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। এদের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের সময় থ্রি হুইলারের কারণে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।’
শুধু ঈদের সময় নয়, সারা বছরই মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন চান সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু।
থ্রি হুইলার চালকদের মহাসড়কে পুলিশ কোনো বাধা দেয় না বলে জানিয়েছেন এগুলোর চালকরাও।
মাহিন্দ্রাচালক মো. জসিম বলেন, ‘মহাসড়ক ধইরাই তো প্রতিদিন যাত্রী নিয়া যাই। কেউ তো কোনো বাধা দেয় না। হেয়া ছাড়া (তা ছাড়া) মোরা তো ডেইলি টাহা দেই। ওই টাহা পুলিশেও নেয়। এইর লাইগাই পুলিশ আমাগো ধরে না।’
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল করতে দেয়া হয় না। তা ছাড়া থ্রি হুইলার থেকে পুলিশের বাড়তি সুবিধা নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তবুও যদি সঠিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে যে পুলিশ সদস্য এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘ঈদ যাত্রাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। কীভাবে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারে, সে বিষয়ে বাসমালিকদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব।’