দেশে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের ধাক্কা সামলে ওঠার পর সংক্রমণ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। ২৫ মার্চের পর থেকে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা একশ’র নিচে রয়েছে। ৪ এপ্রিলের পর তা ৫১ ছাড়ায়নি। এমন পরিস্থিতিতে রোগীশূন্য কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো।
আপাতভাবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর প্রয়োজনীয়তা কমে আসায় এসবের ব্যবস্থাপনা কী হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই। হাসপাতালগুলোর শয্যা, আইসিইউ, এইচডিইউ, ভেন্টিলেটর, হাইফ্লো-ন্যাজাল ক্যানুলা, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ও অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে করোনা চিকিৎসা ব্যবহৃত সরঞ্জামের সঠিক ব্যবস্থাপনা কী হবে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
একইভাবে এখনো টিকার বাইরে থাকাদের এর আওতায় আনা, করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ বিক্রিতে মন্দাভাব কাটানো ও দেশীয় প্রযুক্তিতে টিকা তৈরিতে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে করোনা মোকাবিলায় সরকারের নতুন পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা চিকিৎসায় রাজধানীর ১৫টি সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ১৯৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৩ হাজার ১৩০টিই ফাঁকা পড়ে আছে। ৩৫১টি কোভিড আইসিইউর মধ্যে ৩৪১টি ও ৪২৩টি এইচডিইউ বিছানার মধ্যে ৪১১টি রোগীশূন্য।
সবমিলে সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে ১৩ হাজার ৬৫টি সাধারণ শয্যা, ১ হাজার ৩০টি আইসিইউ এবং ৬৭৭টি এইচডিইউ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৩৮টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ২ হাজার ৩৭৩টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও ১১৯টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।
জেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকার নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘দেশে করোনায় মৃত্যু কমতে শুরু করলেও আক্রান্ত ফের বাড়ছে। গত দুদিনে পঞ্চাশের বেশি শনাক্ত হয়েছে। দেশে সংক্রমণ শুরুর পর ভাইরাসটি প্রতিরোধে বড় বাজেট বরাদ্দসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতিগুলোর কী হবে? কেনার সময়ই ভাবা দরকার ছিলো কিভাবে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু দুর্যোগের দোহাই দিয়ে এলোপাতাড়ি খরচ করা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা এবং জরিপেও তা উঠে আসছে। এখন উচিত হবে দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত পরিকল্পনা নেয়া। নইলে পরবর্তীতে প্রয়োজন হলেও এসব ব্যবহারের অনুপযোগী হবে।’
কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো আইসিইউ ও এইচডিইউ-তে দুই-একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। বিছানা, আইসিইিউ, এইচডিইউ, অক্সিজেন সরঞ্জাম, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ সবকিছুই মেইনটেনেন্স করা হচ্ছে। রোগী কমায় ওয়ার্ড বন্ধ করা এবং চিকিৎসক ও নার্স কমানো হয়েছে।
‘যন্ত্রপাতি সংরক্ষণে রোটেশন পদ্ধতিতে কাজ করা হচ্ছে। ১৫ দিন পর পর এক ওয়ার্ডের সরঞ্জাম অন্য ওয়ার্ডে শিফট করা হচ্ছে। কারণ মেইনটেইন না করলে পরবর্তীতে এগুলো কাজে লাগানো যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এটি কোভিড ডেডিকেটিড চিকিৎসা কেন্দ্র হওয়ায় বন্ধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় করোনা ওয়ার্ডগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনও এই শয্যাগুলো ফাঁকা দেখাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা যন্ত্রপাতিগুলো আমরা ফেলে রাখিনি। এখানে ৪০টি এইচডিইউ বেডে করোনা চিকিৎসা দেয়া হতো। এগুলোর সবই এখন নন-কোভিড রোগীর সেবায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘এছাড়া আইসিইউ ছিল ২০টি। সেগুলোও আমরা নন-কোভিড রোগীর সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহার করছি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাও ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে ১৬ জন রোগী রয়েছে। আর করোনা চিকিৎসার শয্যা সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. বেলাল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিডের রোগী কমে আসছে। ফলে এসব হাসপাতালে কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদেরও চিকিৎসার নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছে।
‘করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসিইউগুলো অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তবে যেসব হাসপাতালে শুধুই করোনার চিকিৎসা দেয়া হতো সেগুলোর ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ওই হাসপাতালগুলোতে অন্য কোনো বিশেষ রোগের চিকিৎসা দেয়া যায় কি না সে বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করব।’
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকা উৎপাদন কতদূর
দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক টিকা তৈরিতে বেশ হইচই ফেলে দিলেও দিন শেষে তা আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাৎক্ষণিক সাড়া না দেয়ায় এমনটা হয়েছে। বঙ্গভ্যাক্স টিকার বিষয়ে কথা বলেছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে। আগামীতে যদি মহামারি আসে সেই প্রস্তুতি থেকে আমাদের টিকা উৎপাদন শুরুর কার্যক্রম চলমান। এই টিকা মানবদেহে ট্রায়ালের অপেক্ষায় রয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমে এলেও দেশের সক্ষমতা বাড়াতে গ্লোব টিকা উৎপাদন করবে।’