বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুলনার মার্কেটে ‘পুষ্পা’ আর ‘কাঁচা বাদাম’ রহস্য

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৩৫

খুলনার নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, সম্প্রতি ‘পুষ্পা’ নামে ভারতে মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি জর্জেটের একটি লাল শাড়ি পরে নেচেছেন। তাই কেউ পুষ্পা শাড়ি চাইলে ওই শাড়িটির মতো দেখতে কিছু জর্জেটের শাড়িকে তারা পুষ্পা নামেই বিক্রি করছেন।  

ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে খুলনার বিপণিবিতানগুলোতে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। তরুণীদের কেউ কেউ এসে দোকানিদের কাছে চেয়ে বসছেন ‘পুষ্পা’ শাড়ি! আর কেউ চাইছেন ‘কাঁচা বাদাম’ নামের একটি কামিজ!

তবে দোকানিরা বলছেন, এই নামে আসলে বাজারে কোনো কাপড় নেই। মূলত লাল জর্জেটের শাড়িতে সিল্কের সুতার ছোট ছোট ফুল দেয়া এক ধরনের শাড়িকেই তারা পুষ্পা শাড়ি বলছেন। তাই নারীদের কেউ পুষ্পা শাড়ি চাইলে দোকানিরা এই শাড়িটিই তাদের সামনে মেলে ধরছেন।

খুলনার নিউ মার্কেটের চার্মিং ফ্যাশনের দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা খুব বেশি দামের শাড়ি নয়। দুই থেকে শুরু করে চার হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের এই ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়।’

তিনি জানান, সম্প্রতি ‘পুষ্পা’ নামে ভারতে মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি জর্জেটের একটি লাল শাড়ি পরে নেচেছেন। তাই কেউ পুষ্পা শাড়ি চাইলে ওই শাড়িটির মতো দেখতে কিছু জর্জেটের শাড়িকে তারা পুষ্পা নামেই বিক্রি করছেন।

কাঁচা বাদাম নামে কামিজ দেখাচ্ছেন দোকানদার। ছবি: নিউজবাংলা

একটু বেশি বয়সের নারীরা কাশ্মীরি সিল্ক, বেনারসি সিল্ক, মসলিন, জয়পুরা, খাজি জর্জেট, গাদোয়াল ও কান্ডিবন ব্র্যান্ডের শাড়িগুলো বেশি পছন্দ করছেন বলে জানান মিজানুর। তিনি আরও জানান, এই ঈদে লাল, নীল, আকাশি, কমলা ও খয়েরি রঙের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটা।

এদিকে পুষ্পা শাড়ির কোনো ব্র্যান্ড নেই, তবু এই নামের শাড়ির চাহিদার রহস্য খুঁজতে গেলে খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রী চৈতালী রায় বলেন, ‘আমি ফেসবুকে দেখেছি। কয়েকটি অনলাইন শপে পুষ্পা নামের একটি শাড়ির বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। এটা দেখেই মার্কেটে খুঁজতে এসেছি। এখন জানতে পারলাম, এই নামে কোনো শাড়ি নেই। তবে এই ধরনের শাড়ি আছে।’

আফসানা ইসলাম লিমা নামের আরেক তরুণী বলেন, ‘আমি বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি। তারপর মার্কেটে এসে সেই শাড়ি খুঁজেছি। শাড়ি পেয়েছি, দামও কম।’

ভারতীয় পাঞ্জাবি দেখাচ্ছেন দোকানদার। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বান্ধবীরা সবাই ঈদে একই ধরনের শাড়ি পরবে। তাই আমিও এই ধরনের শাড়ি কিনলাম।’

শিশুকন্যা থেকে কিশোরী বয়সীদের মধ্যে এবার ‘কাঁচা বাদাম’ নামের একটি কামিজের বিপুল চাহিদার কথা জানালেন খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের বিগ বাজার নামের দোকানি রাজ ইসলাম রাজু।

তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে শুধু কামিজ বিক্রি করি। অধিকাংশ কিশোরী ও তরুণী কামিজ কিনতে এলেই কাঁচা বাদামের নাম বলছেন। আসলে এই নামের কোনো ব্র্যান্ড নেই বা এই নামে কোনো পোশাকও নেই।’

রাজু জানান, ক্রেতাদের আগ্রহের কারণে বাধ্য হয়ে তারা নিজেরাই একটি পোশাককে ‘কাঁচা বাদাম’ বলে ডাকছেন। আর মজার ব্যাপার হলো নতুন নামকরণের পর পোশাকটি বিক্রিও হচ্ছে দেদার।

আবার এমনও অনেকে আছেন, যারা ফেসবুক থেকে ছবি সংগ্রহ করে দোকানিদের দেখিয়ে বলছেন, এটাই কাঁচা বাদাম। দোকানিরাও সেই জামা বের করে কাঁচা বাদাম হিসেবেই তাদের কাছে বিক্রি করছেন।

রাজু বলেন, ‘মূলত ক্রেতারা যা পছন্দ করছেন, তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারাই পছন্দের কামিজকে কাঁচা বাদাম বলছেন।’

এ ছাড়া এবার ঈদে ক্যালভিয়ান জর্জেট, চীনা, কাশ্মীরি ও আজমেরী কামিজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা বাদাম নামের যে কামিজের নাম শোনা যাচ্ছে, তা মূলত এই ধরনের কামিজকেই বলা হচ্ছে। এগুলোর দাম এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্তও আছে।

মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা পোশাক। ছবি: নিউজবাংলা

কেনাকাটায় নারীরা এগিয়ে থাকলেও পুরুষরাও বিভিন্ন পোশাক দামাদামি করে কিনছেন। তাদের পছন্দের শীর্ষে আছে ভারতীয় পাঞ্জাবি।

খুলনার কয়েকটি পাঞ্জাবির দোকান ঘুরে ক্রেতাদের সমাগমও চোখে পড়েছে।

নিউ পাঞ্জাবি হাউজের দোকানি সাগর মোড়ল বলেন, ‘অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার ভারতীয় পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় দেশি পাঞ্জাবির বিক্রি কিছুটা কম।’

তিনি জানান, তরুণরা সাধারণত কাকলী, সুলতান ও শাহরুখ ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন। বয়স্করা জ্যোতি গার্মেন্টস, দ্য লিবার্টি ও হিমু কোম্পানির পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন। এ ছাড়া শিশুদের জন্য মটু পাতলু, গাট্টু বাট্টু ও টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

আরেক দোকানি আশফাক বলেন, ‘কোনো বছরই এত বেশি ভাতরীয় পাঞ্জাবির চাহিদা দেখিনি। এই বছর ছোট-বড় সবাই ভারতীয় পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন। এই পাঞ্জাবিগুলো ১ হাজার ৫০০ টাকা শুরু হয়ে ৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভিড় নেই দর্জির দোকানে

খুলনার আকতার চেম্বারের অন্তত ১০টি দোকানে গিয়ে জানা গেছে, এবার ঈদে দর্জিদের কাছে পোশাক তৈরির অর্ডার কম আসছে।

বিসমিল্লাহ ক্লথ স্টোরের জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদে আমাদের তেমন কাপড় বিক্রি হয়নি। অনেক আশা নিয়ে এবার বেশি পরিমাণে কাপড় এনেছিলাম। তবে বিক্রি অনেক কম।’

আমির নামে আরেক দর্জি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে যেভাবে ভিড় থাকার কথা, এবার তেমনটি নেই। অন্যান্য বছর আমরা ১৫ রোজার পর অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেই। কিন্তু এবার কাজের পরিমাণ খুবই কম।’

এ বিভাগের আরো খবর