ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ইফতারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি দেখা গেল ক্ষমতাসীন ১৪ দলের এক শরিককে, যিনি ঘোষণা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি।
এই ইফতারের আগে হয় আলোচনা সভাও, যেখানে বিএনপি মহাসচিব সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
মঙ্গলবার বাংলামটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে ওয়ারফল রেস্তোরাঁয় এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর আগে হয় ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলন’ শীর্ষক আলোচনা।
এই আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়াও।
২০১৬ সাল থেকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আম্বিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। ওই বছরের শেষ দিকে তিনি জাসদ থেকে বের হয়ে আলাদা দল গঠন করেন, নাম রাখা হয় বাংলাদেশ জাসদ।
আম্বিয়া ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাকে জোটের মনোনয়ন দিলেও পরে তা পাল্টে দেয়া হয়। এ নিয়ে তখন থেকেই আম্বিয়া নাখোশ ছিলেন।
গত মার্চের মাঝামাঝি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ দলের যে সভা ডাকেন, তাতে যোগ দেননি আম্বিয়া। সেই সভার আগের দিন আম্বিয়া ক্ষমতাসীন জোট সম্পর্কে মূল্যায়ন করেন এভাবে, ‘১৪ দল তো মরে গেছে, ইট ইজ ডেড’।
নিউজবাংলাকে তিনি ১৪ মার্চ বলেন, ‘একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক জোট করা যায় কি না সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি, বাট নট উইথ বিএনপি।’
ইফতারপূর্ব আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে রুখে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য আজকে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।
‘আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এই দেশকে এই ফ্যাসিবাদীর হাত থেকে রক্ষা করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা, দেশের মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দেয়া এবং নিরপেক্ষ একটি সরকারের মধ্য দিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করা। আসুন, আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করি।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘জনগণ স্পষ্ট জানতে চায়, কোনো গোঁজামিল নয়। আমরা কী করতে চাই, কীভাবে করতে চাই, তা পরিষ্কারভাবে বলতে হবে। আসলে আমরা মাঠে নামলে জনগণ মাঠে নামবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একাত্তর সালে জনযুদ্ধ করেছি। এবার হবে গণযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমে জনগণের অধিকার আদায় করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলন করছি।’
এই সরকারকে রেখে দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সমস্যাকে দলীয়ভাবে চিন্তা করলে সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। জাতীয় সমস্যা জাতীয়ভাবে সমাধানের জন্য জাতীয় সরকার দরকার।’
রবও জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য জাতীয় সরকার করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অতএব যারা জাতীয় সরকারে বিশ্বাস করে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতনে আন্দোলন শুরু করতে হবে। জনগণ মাঠে নামলে এই সরকার এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’
গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরীর পরিচালনায় এই আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, পিপলস পার্টির বাবুল সরদার চাখারীসহ গণফোরামের নেতারা অংশ নেন।