বরিশালের নিয়ামতি ইউনিয়নে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুতে উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে সেটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।
বিকল্প মাধ্যমে তৈরি না করেই সিঁড়ি ভাঙা নিয়ে চলছে সমালোচনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন, এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এখন লাফ দিয়ে সেতু থেকে নামতে হচ্ছে। বেড়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
কবে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। তবে ঠিকাদার বলছেন, দ্রুতই কাজ শুরু করবেন। এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নিয়ামতি ইউনিয়নের ভাড়ানি খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণ করে এমএস রূপালি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক মাস আগে সেটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে ব্রিজের এক পাশে সংযোগ সড়কের পরিবর্তে এতে ওঠা নামার জন্য করে দেয়া হয় সিঁড়ি।
যে কারণে সংযোগ সড়ক হয়নি
কেন সংযোগ সড়ক করা গেল না এই প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার সুধান সরকার বলেন, ‘ওই খাল দিয়ে কার্গোসহ বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত নৌযান চলাচল করে। ব্রিজের উচ্চতা কম হলে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হতো। উচ্চতা ঠিক রাখতে গিয়ে দক্ষিণপ্রান্তে ব্রিজটি সমতল থেকে বেশি উঁচু হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজটি দক্ষিণ প্রান্তে যে উচ্চতায় শেষ হয়েছে সেখান থেকে সমতলের দূরত্ব সাড়ে ৫ ফুট। ব্রিজের শেষ প্রান্ত থেকে ৪ ফুট দূরত্বেই একটি ব্যস্ততম সড়ক। এখন এই চার ফুটের মধ্যে তো ওই ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব নয়। ব্রিজটি যে উচ্চতায় শেষ হয়েছে সেটির সংযোগ সড়ক করেতে হলে ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যস্ততম সড়কটিরও উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে।’বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, যেভাবে সংযোগ সড়ক করা প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী ব্রিজের দক্ষিণ পাশে জায়গা নেই। এক্ষেত্রে সড়কটি দুইপ্রান্ত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে উচুঁ করতে হবে। তাহলে সড়কের সঙ্গে সেতুর উচ্চতা কমে আসবে। তখন নিরাপদ সংযোগ সড়কও করা যাবে।
এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো. জামাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রিজটির উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে আমাকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছিল।
‘দেশে ফেরার পর দেখি ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের সঙ্গে সড়কে সংযোগ দেয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে জটিলতা এড়ানো যেত। তদারকিতে উপজেলা প্রকৌশলীর গাফিলতি ছিল। তাই উপজেলা প্রকৌশলীকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী
স্থানীয় আব্দুর রব জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশে বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ও উত্তর পাশে রামনগর সড়ক। এ সড়কটি রামনগর হয়ে নলছিটি উপজেলার মোল্লার হাটের দিকে মিলিত হয়েছে। রামনগর, কাফিলা, মোল্লার হাট, তালতলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় দেড় কিলোমিটার ঘুরে মহেশপুর বাজার হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সিঁড়ি ভাঙার কারণে এখন লাফ দিয়ে নামতে হচ্ছে বলে জানান নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, সোমবার রাতে ভেঙে ফেলা হয় সিঁড়ি। এরপর আরও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে এলাকার মানুষ। আগে তো সিঁড়ি দিয়ে নামা যেত। এখন ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু থেকে লাফ দিতে হচ্ছে। কয়েকদিন পর শুনতে পারবেন কারও হাত ভাঙছে বা পা ভেঙেছে।
স্কুলছাত্র রবিউল ইসলাম বলেন, এই ব্রিজ পার করে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। এতদিন তো সিড়ি বেয়ে উঠে স্কুলে যেতে পারতাম। আজকে সকালে দেয়ালে যেভাবে লাফ দিয়ে উঠি ঠিক সেইভাবে উঠতে হয়েছে। ব্রিজের ওঠার বিকল্প ব্যবস্থা না করে সিড়ি ভেঙে ফেলা ঠিক হয়নি।
শিশু সন্তানকে নিয়ে ব্রিজ থেকে নামতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় কহিনুর বেগমকে। তিনি বলেন, ছেলেকে আগে নামিয়ে তারপর ধীরে ধীরে নিজের নামতে হয়েছে। এমন অবস্থায় তো যে কেউ দুর্ঘটনার মুখে পড়বে। সিঁড়ি ভাঙার আগে তো পরিকল্পনার দরকার ছিল, ভাবার দরকার ছিল।
ঠিকাদার সুধান সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলজিইডি থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে, তবে এর জন্য কোনো বরাদ্দ বা স্টিমেট পাইনি। তবে শিগগিরই কাজ শুরু করব।’
এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো. জামাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলেই তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এই বরাদ্দ আসবে সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।