বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দোকানিদের সংঘাতে যেভাবে জড়াল ঢাকা কলেজ

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:০১

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি বা খাবারের দোকানে কম মূল্য পরিশোধ নয়, বরং নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের নিজেদের বিবাদ থেকে সংঘাতের শুরু।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে।

সোমবার মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বন্ধ রয়েছে নিউ মার্কেট এলাকার সকল দোকানপাট ও সড়কে যান চলাচল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ঢাকা কলেজ ও এর ছাত্রাবাসগুলো।

সোমবার রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হলেও এর নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল না। একেক সূত্র একেক কারণ বলছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি বা খাবারের দোকানে কম মূল্য পরিশোধ নয়, বরং নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের নিজেদের বিবাদ থেকে সংঘাতের শুরু। এ বিবাদে একপক্ষকে শায়েস্তা করতে অন্যপক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে। পরবর্তীতে এটিই ব্যবসায়ী বনাম শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

নিউ মার্কেটে ফাস্টফুডের এই দোকান কর্মচারীদের বিরোধ থেকে সংঘাত শুরু।

নিউ মার্কেটের কয়েকটি ফাস্টফুড দোকানের মালিক, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।

ঘটনার শুরু ইফতার পণ্যের টেবিল সাজানো নিয়ে

নিউ মার্কেটের-৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই ‘ওয়েলকাম’ নামের ফাস্টফুডের দোকান। সামনেই ‘ক্যাপিটাল’ নামের আরেকটি ফাস্টফুড দোকান। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউ মার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।

সোমবার সন্ধ্যায় এই টেবিল পাতা নিয়ে দুই পক্ষের বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে। বিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যায়।

এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০-১২ জন যুবক আসে নিউ মার্কেটে। এ সময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসে। তারা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ায়। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যবসায়ী বিতণ্ডার এই ঘটনা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।

নিউ মার্কেটে ফাস্টফুডের এই দোকান এবং ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডের দোকান কর্মচারীদের বিরোধ থেকে সংঘাত শুরু।

ওয়েলকাম ফাস্টফুডের মালিক মো. রফিক নিউজবাংলার কাছে এ বিতণ্ডার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘কাওসার টেবিল রেডি করার সময় বাপ্পীকে মেরেছিল। এরপর আমি বাপ্পীকে বলেছিলাম আমরা বিষয়টা মীমাংসা করে দেব। কিন্তু এর মধ্যে রাতে বাপ্পী তার পরিচিত ঢাকা কলেজের বন্ধুদের বিষয়টা জানালে ঢাকা কলেজের কয়েকজন এসে কাওসারকে জিজ্ঞেস করে, কেন তারা বাপ্পীকে মেরেছে। তখন কাওসার আর তার সাথের ছেলেরা কলেজের ছেলেদের ওপর দোকানের ছুরি-চাপাতি নিয়ে হামলা করে। কলেজের ছাত্রদের গায়ে হাত তোলায় পরে ছাত্ররা সব দল বেঁধে আসে। আমি বাপ্পীকে মানা করেছিলাম এসব করতে, কিন্তু বাপ্পী শোনেনি।’

এ বিষয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের মালিক শহিদুল ইসলাম সরদারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে নিউ মার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলী বলেন, ‘যদ্দূর জেনেছি, দুই ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীর মধ্যে ঝামেলায় একপক্ষের হয়ে ঢাকা কলেজের ছেলেরা এসেছিল। এরপর এই ঝামেলা শুরু।’

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল

নিউ মার্কেটের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে নিউজবাংলা। সেখানেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়।

দোকানিদের বিরোধে একসময় জড়ায় ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। তারা রামদা নিয়ে সেখানে যান। ছবি: নিউজবাংলা

ইফতারের সময়ের ফুটেজে তেমন কিছু দৃশ্যমান না হলেও মূল ঘটনা ধরা পড়ে রাত ১১টা ৩ মিনিটে। তখন দেখা যায় ৪ নম্বর গেট দিয়ে রামদা হাতে সাদা টি-শার্ট পরা এক তরুণের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল মার্কেটে প্রবেশ করে। এরপর তারা ওয়েলকাম ফাস্টফুডে ঢুকে সেখান থেকে বেরিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের দিকে যায়। সেখানে দোকানের বাইরেই গণ্ডগোল শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর মার খেয়ে পালিয়ে যায় বহিরাগত তরুণরা। তারা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে ক্যাপিটাল দোকানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিপদ আঁচ করতে পেরে সে সময় মার্কেটের ৪ নম্বর গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে হেলমেটধারী কলেজছাত্ররা এসে ৪ নম্বর গেট ভাঙতে শুরু করে। রাত ১২টার দিকে ছাত্ররা ২ নম্বর গেট খুলে মার্কেটে ঢুকে কিছুক্ষণ ভাঙচুর করে আবার বেরিয়ে যায়। এ সময় তাদের দুটি দোকান ভাঙচুর করতে দেখা যায়। তখন থেকে ব্যবসায়ীসহ হকাররা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ বিভাগের আরো খবর