সকালে অফিস যেতে বাহনের অপেক্ষায় মানুষ, এই সময় একটি প্রাইভেটকার এসে দাঁড়াল। তাতে যাত্রীর আসনে দুই বা তিন জন। একটি বা দুটি আসন ফাঁকা। বাসে ভিড়ের মধ্যে ভোগান্তির যাত্রা থেকে রক্ষা পেতে এই গাড়িতে চাপলেই বিপদ।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা এভাবে যাত্রী বহনের প্রস্তাব দিয়ে ছিনতাই করত।
এই চক্রের ৫ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পাশাপাশি লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বাহিনীটি বলছে, যেসব যাত্রী বিশ্বাস করে গাড়িতে উঠত, তাদেরকে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে নিয়ে খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ ও চাঁদা আদায় করা হতো।
বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক থেকে মানুষকে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে টাকা পয়সাও লুটে নেয়া হতো।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ও নরসিংদীর শিবপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: আব্দুল বারেক ওরফে রানা, হিরু মোল্লা, নিজাম উদ্দিন, জাকির হোসেন ও নজরুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি খেলনা পিস্তল, দুইটি ছুরি, একটি চাপাতি, একটি লোহার পাইপ, পাঁচটি মোবাইল ফোন, এবং অপহরণের শিকার একজনের একটি মোবাইল ফোন ও একটি প্লাস জব্দ করা হয়।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া বাউশিয়ায় ফ্ল্যাস ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কের কর্মী রুস্তম খানকে অপহরণ করা হয়।
২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি কর্মস্থলে যাওয়ার সময় সকাল আনুমানিক ৮টা ২০ মিনিটে যাত্রাবাড়ী বাদশা মিয়া রোডের মাথায় দাঁড়িয়েছিলেন রুস্তম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
প্রাইভেটকার থেকে দুই জন লোক নেমে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে চোখে কালো চশমা পরিয়ে দেয়া হয় তাকে। পরে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেয়েকে ফোন করতে বলা হয়।
এরপর মুক্তিপণ চাওয়া হলে রুস্তমের স্ত্রী প্রথমে বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। পরে তারা রুস্তমকে আরও টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিলে তার স্ত্রী আসামিদের বিকাশ নম্বরে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠান।
পরে বিকাল আনুমানিক ৪টায় মুন্সিগঞ্জ গজারিয়া বাউশিয়ার একটি নির্জন জায়গায় রুস্তমকে ফেলে চলে যায় গাড়িটি।
এই ঘটনায় রুস্তম যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। ঈদের আগে এ ধরনের আরও কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তদন্তে দেখা গেছে, যাদেরকে ধরা হয়েছে, তারা গত কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের অপরাধ করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অপহরণ বা মুক্তিপণ, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, অস্ত্র, বিষ্ফোরক, মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা আছে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আব্দুল বারেক, হিরু মোল্লা, নিজাম উদ্দিন, জাকির হোসেন ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং নজরুল ইসলাম লুট হওয়া মালামাল নিজের কাছে রেখে বিক্রি করেন।
তারা অপরাধ সংঘটনের আগে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জনসমাগম স্থানে অবস্থান নিয়ে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদেরকে নানা কৌশলে গাড়িতে তুলে অপহরণ করত।