একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে সাভারে পোস্টারিং করেছে ছাত্রশিবির। মহাসড়কের ডিভাইডার ও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে সেসব।
‘মাহে রমজানের ডাক’ শিরোনামে পোস্টারে ১০টি আহ্বান জানানো হয়েছে। তার মধ্যে সবশেষে লেখা হয়েছে সাঈদীসহ সব জাতীয় নেতাদের কারামুক্তির দাবির কথা।
পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায় সড়ক বিভাজকজুড়ে আছে পোস্টারগুলো। পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি, শিমুলতলা, ছায়াবীথিসহ বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে ও গলির মুখের দেয়ালে এই পোস্টার দেখা গেছে।
কখন, কারা এই পোস্টার সাঁটিয়েছেন তা বলতে পারেননি কেউই। স্থানীয়দের ধারণা রাতের কোনো এক সময় এগুলো লাগানো হয়েছে।
রেডিও কলোনি এলাকায় আল মুসলিম গার্মেন্টসের সামনে ভাসমান চা বিক্রেতা মো. রেজোয়ান বলেন, ‘আমি প্রায় সারা দিনই এদিকে চা বিক্রি করি। অনেকেই তো পোস্টার লাগায়। এই পোস্টার আগে দেখিনি। আজকেই দেখলাম।’
একই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘গতকাল রাতে বাসায় ফেরার সময়ও এই পোস্টার দেখিনি। আজকে সকালে দেখলাম এক জায়গায় অনেকগুলো পোস্টার সাঁটানো। এমনভাবে সাঁটানো হয়েছে যে সবারই চোখে পড়বে।’
হঠাৎ এভাবে শিবিরের অস্তিত্ব জানান দেয়ার বিষয়ে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম সমর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রমজান মাসে মূলত এই ধরনের উগ্রপন্থি, মৌলবাদী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
‘ঈদের পরে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও বিষয়গুলো জানাব এবং কর্মসূচি ঘোষণা করব। এ ছাড়া কিছু গোপন কর্মসূচি আছে, সেগুলোর মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেব।’
বিষয়টি জানা নেই বলে জানান সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাঈনুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিবিরের বিষয়ে আমি আপসহীন। তবে আমার অফিসারদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করব। কী করা যায় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছিল ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে ছাত্র সংগঠনটির বিরুদ্ধে। তবে ২০১৫ সালে সরকার পতন আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কোনো কোনো দিন কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিল ছাড়া সংগঠনটির প্রকাশ্য কর্মসূচি সেভাবে দেখা যায়নি। গোপন বা ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে এতদিন সীমিত ছিল তাদের কর্মকাণ্ড।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন জেলায় মিছিল বের করে প্রকাশ্যে আসে ছাত্রশিবির।
সাভারে অবশ্য গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও মিছিল করে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠটি। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ইউনিক এলাকায় ওই ঝটিকা মিছিল হয়।