বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেলের বাড়তি দরে চাপে দেশি এয়ারলাইনস

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৩১

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। ভাড়া বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আরেক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। এর কারণ, ভাড়া বাড়ার সঙ্গে ক্রমেই কমছে আকাশপথে যাত্রী।

বিশ্বে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৮-১৯ সালের দিকে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের ফ্লাইটে জনপ্রতি ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭০০ টাকা। এই তিন-চার বছরে এই ভাড়া এখন ৪ হাজার ৯৯৯ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে আকাশপথে এই রুটটিতে ভাড়া হয়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ।

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এই সময়ে উড়োজাহাজের জ্বালানি এভিয়েশন ফুয়েল বা জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে এক লিটার জেট ফুয়েল কিনতে এয়ারলাইনসগুলোকে খরচ করতে হতো ৪০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকা।

একটি ফ্লাইটের পরিচালনা ব্যয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ নির্ভর করে জেট ফুয়েলের দামের ওপর। তাই জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভাড়ায়।

জ্বালানির বাড়তি মূল্য সমন্বয় করতে ধাপে ধাপে বেড়েছে টিকিটের দাম। কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল আকাশপথের যাত্রীসংখ্যা।

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, তারা ভাড়া বাড়ানোর পর উল্টো ক্ষতি হয়েছে। এর কারণ, ভাড়া বাড়ার সঙ্গে ক্রমেই কমছে আকাশপথে যাত্রী।

জেট ফুয়েলের দাম যেভাবে বাড়ছে

জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের তথ্য বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের জন্য জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা, মার্চে তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা। এপ্রিলে তা ছিল ৬১ টাকা।

মে মাসে এক টাকা কমে দাম। এরপর আবার দাম বাড়ে। জুনে তা হয় ৬৩ টাকা, জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০, নভেম্বরে ৭৭ টাকায় পৌঁছে দাম।

এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ টাকা করে কমলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ৭ টাকা করে বেড়ে হয় ৮৭ টাকা। এপ্রিলে বাড়ানো হয় ১৩ টাকা। এখন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্যও বেড়েছে জেট ফুয়েলের দাম। এখন থেকে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল কিনতে হবে ১ দশমিক শূন্য ২ ডলার বা ৮৮ টাকায়।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫০ সেন্ট (৪২ টাকা), মার্চে ৫৫ সেন্ট (৪৬ দশমিক ৭৫ টাকা), মে মাসে ৫৬ সেন্ট (৪৭ দশমিক ৬ টাকা), জুনে ৫৯ সেন্ট (৫০ দশমিক ১৬ টাকা), জুলাইয়ে ৬২ সেন্ট (৫২ দশমিক ৭ টাকা), আগস্টে ৬৩ সেন্ট (৫৩ দশমিক ৫৫ টাকা), অক্টোবরে ৬৫ সেন্ট (৫৫ দশমিক ২৫ টাকা) এবং নভেম্বরে ৭৩ সেন্ট (৬২ দশমিক ০৫ টাকা)।

এ বছরের জানুয়ারিতে পদ্মা অয়েল প্রতি লিটার জেট ফুয়েল ৬৭ সেন্ট বা ৫৭ টাকায় সরবরাহ করেছে এয়ারলাইনসগুলোকে। আর ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫ সেন্ট বা ৬৪ টাকা।

যাত্রী কমে অর্ধেক

দেশি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটস অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লেই ভাড়া বাড়ে আর ভাড়া বাড়লেই যাত্রী কমে যায়। এটা আমরা এখনই বুঝতে পারছি। কারণ তেলের দাম সমন্বয় করতে গিয়ে আমাদের ভাড়া বাড়াতে হয়েছে। যাত্রী এরই মধ্যে অর্ধেকের মতো কমে গেছে। প্রভাব এরই মধ্যে ফেলেছে এবং আরও ফেলবে।’

পরিস্থিতি এখন শাঁখের করাতের মতো। কাটছে দুই দিকেই। এর সমাধান কীভাবে হবে, সেটি জানা নেই মফিজুরের।

এর আগে ২০০৮-০৯ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি এক ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে বছর দেশের আকাশে পাখা মেলে দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস বেস্ট এয়ার এবং এভিয়ানা এয়ারওয়েজ। জেট ফুয়েলের বাড়তি দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পেরে খুব কম সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় এয়ারলাইনস দুটো।

সে সময় জেট ফুয়েলের দাম উঠেছিল ১ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে। এত বছর পর আবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দেশি এয়ারলাইনসগুলো।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেট ফুয়েলের দামের সরাসরি একটি প্রভাব পড়বে। এখন ঈদের সময় দেখে বিষয়টি অতটা বোঝা যাচ্ছে না। এর কারণ ঈদের সময় এমনিতেই একটি বাড়তি চাপ থাকে। স্বাভাবিক সময়ে বা দীর্ঘমেয়াদে এটার প্রভাব বোঝা যাবে। যাত্রী প্রবৃদ্ধির ওপর এর সরাসরি একটি প্রভাব পড়ার কথা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর জন্যও কিন্তু জ্বালানিতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। এটি যদি চলমান থাকে তাহলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে আমাদের যে প্রতিযোগিতা, তাতে আমরা পিছিয়ে যাব। আমাদের যে বাজার আমরা এতদিন ধরে তৈরি করেছি, সেটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’

গত ২৫ বছরে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে কেবল দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার।

করোনার মধ্যে ২০২০-এর মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে রিজেন্ট এয়ার। কয়েক দফা চালুর কথা বললেও আর ফ্লাইটে ফেরেনি তারা। বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে জিএমজি, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালাত।

দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়া ফ্লাইটে রয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার।

তেলের দাম ইস্যুতে দেশি এয়ারলাইসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত এভিয়েশেন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলমের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি ফ্লাইটের অপারেটিং কস্টের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই জ্বালানি খরচ। এই জায়গায় যদি তারতম্য হয়, তাহলে তো স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বাড়বে। এটা একটা চেইন রিঅ্যাকশনের মতো। যখন এয়ারলাইনসের ওপর চাপ পড়বে, সে সেটা যাত্রীদের কাছ থেকেই আদায় করবে।

‘ভাড়া বাড়লে দেখা যাবে কিছু যাত্রী হয়তো সেটা মেনে নেবে। কিন্তু অনেক যাত্রী আবার সেটার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবে না। এখন আকাশপথে ভ্রমণের যে কমফোর্ট, সেটা অনেকেই বুঝে গেছে। কিন্তু যখন সাধ্যের বাইরে চলে যাবে, তখন তো আর এফোর্ট করতে পারবে না।

‘এতে যাত্রীর লোড যেটা আছে, সেটা ড্রপ করবে। এতে শেষ পর্যন্ত এয়ারলাইনসগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

জ্বালানির দাম বাড়লেও এখনই ভাড়া না বাড়াতে এয়ারলাইনসগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের সময় ভাড়া বাড়লে মানুষের জন্য কষ্ট হবে। জেট ফুয়েলের দাম বাড়ছে এটাও ঠিক, কিন্তু ভাড়াটাও সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এখন ফুয়েলের দাম বেড়েছে, হয়তো একসময় কমে যাবে। এগুলো কনসিডারেশনে রাখতে হবে।’

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর হিসাব বলছে, প্রতি বছর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গন্তব্যে আকাশপথে ভ্রমণ করেন অন্তত ১৮-২০ লাখ যাত্রী। প্রতি বছর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে ৭ শতাংশ হারে।

অবশ্য ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর নানা বিধিনিষেধের কারণে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যাত্রী হারিয়েছে দেশি এয়ারলাইনসগুলো।

এ বিভাগের আরো খবর