রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজনা চলে ভোর পর্যন্ত। এ ঘটনার জের ধরে নিউ মার্কেট খুলতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সংঘর্ষের শুরুর দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। এ সময় উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ থামলেও নিউ মার্কেট এলাকাজুড়ে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে।
পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন।
ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব বলেন, ‘আমাদের তিন বড় ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একজন আইসিইউতে আছেন। আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা এটির প্রতিকার চাই। বড় ভাইরা নির্দেশ দিয়েছেন, এ ঘটনার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাল থেকে আমরা নিউ মার্কেট খুলতে দেব না।’
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের তিন বন্ধু নিউ মার্কেটে খেতে গিয়েছিল। এ সময় দোকানে থাকা কর্মচারীরা তাদের মারধর শুরু করে। পরে আমরা গিয়ে তাদের প্রতিহত করি। এরপর থেকেই ঝামেলার শুরু।’
শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, পুলিশ যখন তাদের দিকে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করছিল, তখন ব্যবসায়ীরাও তাদের পাশে ছিলেন।
মাহবুব বলেন, ‘পুলিশ-ব্যবসায়ী এক হয়ে আমাদের দিকে আক্রমণ করেছে। অথচ ব্যবসায়ীদের বাধা দেয়া উচিত ছিল।’
সার্বিক বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউ মার্কেটে যায়। যে দোকানে তারা গিয়েছিল, সেই দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে তাদের তর্ক হয়। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য মতে, সেই কর্মচারী তাদের গায়ে হাত তুলে। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দলবল নিয়ে নিউ মার্কেট এলাকায় আসে। এ সময় তারা প্রথমে নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেট ও পরে ২ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ২ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে কয়েকজন ঢুকেও পড়ে। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি।
‘আমাদের অনুরোধ শুনে তারা ফিরেও যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা রাস্তায় চলে আসার কারণে তাদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়।’
শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাবার বুলেট নিক্ষেপ করিনি। আমরা শুধু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছি। আমাদের বাহিনীকে সে রকমই নির্দেশ দেয়া ছিল।’
আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে, অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখী অবস্থান
মার্কেট খুলতে না দেয়ার দাবির বিষয়ে ডিসি সাজ্জাদ রহমান বলেন, ‘এটা রমজান মাস। রমজানের শেষ দশক চলে এসেছে। এখন দোকানপাট বন্ধ রাখার দাবি কোনো বিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন। যদি কোনো সমঝোতার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি তারা করবেন। মার্কেটের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু মার্কেট খুলতে না দেয়ার বিষয়টি যথাযথ সিদ্ধান্ত নয়।’
পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিছকই দাবি। সত্য নয়।’
এ সময় সংঘর্ষে আহতের প্রকৃত সংখ্যাটি জানাতে পারেনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউই।
রাত সোয়া ৩টায় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এবং হলের প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে তাদের কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যান।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা কলেজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে অধ্যক্ষের বরাতে একটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণায় বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণে ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণির সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। সব শিক্ষককে সকাল ১০টার মধ্যে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।