১২ বছর আগে ১০ বছরের এক কন্যাশিশুর খোঁজ পায় ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশ। এদিক সেদিক ঘুরছিল শিশুটি। পুলিশ তার নাম ঠিকানা জানার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এসব কোনো তথ্যই দিতে পারেনি সে।
ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা ব্যর্থ হলে পরে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল শিশুটির ছদ্মনাম ‘কুমু’ দিয়ে একটি নিখোঁজ ডায়রি করে পুলিশ। পরে আদালত কুমুকে ফরিদপুর জেলা সমাজসেবার সেফ হোমে পাঠায়।
সেই থেকে ফরিদপুরের সেফ হোমই ছিল কুমুর ঠিকানা। সে তার বাবা-মার নাম পরিচয় তার আর মনে করতে পারেনি। ধীরে ধীরে সেখানেই বড় হতে থাকে সে। সময়ের ব্যবধানে ১০ বছরের সেই কুমু এখন ২২ বছরের তরুণী।
এদিকে, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুর ইউনিট জানতে পারে কুমুর বিষয়টি। এই প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী অর্চনা দাস কুমুর জন্য কিছু একটা করার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। প্রায় ৫ মাস ধরে কুমুকে কাউন্সিলিং করতে থাকেন তিনি। জানতে চেষ্টা করেন, শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়া কুমুর অতীত। তাতে ব্যর্থ হন তিনি।
অর্চনা দাস বুঝতে পারেন, কুমু এখন অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি অনুভব করেন, কুমুর একটি পরিবার দরকার। তাই তিনি কুমুকে রাখতে আগ্রহী হবে এমন একটি পরিবারের খোঁজ শুরু করেন।
অবশেষে সমাজসেবার গাজীপুরের এক উপ-তত্ত্বাবধায়ক কুমুর দায়িত্ব নিতে রাজি হন। তিনি ফরিদপুরে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। কুমুর বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন তিনি।
অর্চনা দাস বলেন, ‘সোমবার (১৮ এপ্রিল) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলী আদালত কুমুর জবানবন্দি নেন। কুমু এখন প্রাপ্তবয়স্ক। সেই পরিবারের সঙ্গে থাকার বিষয়ে নিজের সম্মতির কথা জানায় কুমু। তার দায়িত্ব নেবার বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর আদালত কুমুকে নিজ জিম্মায় মুক্ত করেন।’
অর্চনা দাস জানান, আগ্রহী দেলোয়ার হোসেন কুমুকে তার পরিবারে বাচ্চাদের দেখভাল করার তার বাড়িতেই রাখবেন।
গাজীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-তত্ত্বাবধায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কুমু পরবর্তীতে নিরাপদ স্থানে বা চাকরি পেলে বা বিয়ে করে স্বাধীনভাবে নিজের মতো জীবন কাটাতে পারবে।’
কুমুর মুক্তির বিষয়ে ব্লাস্টের জেলা সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘বন্দীদশায় শৈশব কাটিয়ে কুমু এখন মুক্ত। সে এখন পরিপূর্ণ তরুনী। তবে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিকানা, পিতা-মাতা কারও কথাই সে বলতে পারে না। মুক্ত হয়েও সে প্রায় প্রতিক্রিয়াহীন।’
নির্যাতনমুক্ত ও বৈষম্যহীন পৃথিবীতে কুমুর মতো অসহায় নারীরা যেন প্রজাপতির মতো রঙিন ডানা মেলে ঘুরতে পারে- এমন আশা প্রকাশ করেন শিপ্রা।
কুমুর বিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এস এম আলী আহসান বলেন, ‘কুমু আজ থেকে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে। সে তার জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেফ হোমে আরও অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী আছেন। তাদের ব্যাপারেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’