পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে কূটনীতিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে ৬৫জন কূটনীতিক তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এ ছাড়াও ২২ জন কূটনীতিক পদত্যাগ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কূটনীতিকরাই বিদেশে জনমত গড়ে তুলেছিলেন।
‘ফরেন সার্ভিস ডে’ উপলক্ষে সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কূটনীতিকরা তাদের জীবন বাজি রেখে বিদ্রোহ করেছিলেন। সেদিন তারা চরম ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বিদ্রোহী ৬৫ জনের পাশাপাশি পরবর্তীতে ২২ জন কূটনীতিক পদত্যাগ করায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বেকায়দায় পড়ে যায়। এর ফলে পাকিস্তান সরকারের ওপর বহির্বিশ্ব থেকে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়।
‘কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনটি ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের। বিদেশে কূটনীতিকদের তৎপরতা বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা সেসব কূটনীতিককে বড় আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণ করার পাশাপাশি তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তরুণ বাঙালি কর্মকর্তাদের প্রলোভন দিয়েও পক্ষে নিতে পারেনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন স্বাধীনতা যুদ্ধে কূটনীতিকদের বিদেশে তৎপরতার অবদান উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের মহান ভূমিকার জন্যই আজ আমরা রেডিমেড ডিপ্লোমেটিক প্লাটফর্ম পেয়েছি। তাই আমরা তাদের অবদানকে স্মরণে রাখতে চাই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতাটা ছিল একটি জনযুদ্ধ। সেদিন আমাদের তিনজন রাষ্ট্রদূত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনজন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে একজন স্বাধীনতা পদক পেলেও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় স্বীকৃতি দেয়নি। এটি দুঃখজনক। বিদেশে বাংলাদেশের দূত হিসেবে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
‘বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তমদের তো মুক্তিযোদ্ধার সনদ দরকার হয় না। তাহলে বিদেশের মাটিতে যারা দেশের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন তাদের কেন গেজেটভুক্ত হতে সনদ দরকার হবে?’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীসহ সাবেক রাষ্ট্রদূত ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কূটনীতিকরা।