বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার আশ্বাস লোকদেখানো: লুনা

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৫৬

লুনা বলেন, ‘হরতাল চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে কেউ একজন মেসেজ করেছিল, আমি যাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। দেখা করলে উনি এ বিষয়টায় সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। মেসেজটা পেয়ে আমি দেখা করেছিলাম এবং উনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে ওনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং খুঁজে বের করবেন।’

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ থেকে দেয়া আশ্বাসকে লোকদেখানো বলে মনে করেন তার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা।

বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরাই যে ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে, এটা নিশ্চিত। ঘটনার পর ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সাক্ষাতের আয়োজন এবং ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস ছিল লোকদেখানো।

সে সময় বিএনপির ডাকা হরতাল ও আন্দোলন বন্ধ করতেই এমন কৌশল নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন লুনা।

সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর এসব কথা বলেন।

লুনা বলেন, ‘হরতাল চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে কেউ একজন মেসেজ করেছিল, আমি যাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। দেখা করলে উনি এ বিষয়টায় সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। মেসেজটা পেয়ে আমি দেখা করেছিলাম এবং উনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে ওনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং খুঁজে বের করবেন।’

তিনি বলেন, পরে যত দিন যায়, তিনি বুঝতে পারলেন যে এটি আসলে লোকদেখানো। বিএনপির আন্দোলন বন্ধ করার জন্য ছিল সেটা। যাতে মানুষকে দেখানো যায় যে, সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে।

লুনা বলেন, ‘বনানী ২ নম্বর রোডে আমার বাসা। আশপাশের সিকিউরিটি গার্ড, ডাব বিক্রেতা ছিল। ওই সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তাও সেখানে ছিল, যার কথা সংবাদমাধ্যমেও এসেছিল। ধস্তাধস্তি দেখে উনি যখন গাড়ির সামনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তখন তাকে আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থার কার্ড শো করা হয়েছিল যে তারা আইনের লোক।’

আক্ষেপের সুরে লুনা বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা অনেকবার তাদের বাসায় এসেছে, অনেক দিন সিসি ক্যামেরাও লাগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেটা তদন্তের জন্য নয়, সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল বাসায় কারা কারা যাতায়াত করে সেটি দেখার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলী গুমের পর কোনো একজন মানুষকে উনারা থানা নিয়ে গেছেন, বা কোথাও নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, এ রকম কোনো ঘটনা আমরা দেখিনি। তারা নির্লিপ্ত ছিল। সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য ছিল খুবই মর্মান্তিক এবং পরিহাসমূলক।’

লুনা অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা ইলিয়াস আলীকে গুম করার ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। ঢাকা শহরে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার ছাপিয়ে তারা ইলিয়াস আলীকে একজন খারাপ লোক হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।’

স্বামী নিখোঁজের পর গত ১০ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তাহসীনা রুশদীর।

তিনি বলেন ‘এই সরকার আমাদের নামের সঙ্গে একটি পরিচয় জুড়ে দিয়েছে। সেটি হলো আমরা গুম পরিবারের সদস্য। এই গুম পরিবারের সদস্য বলে অফিস-আদালত, দেশের যেখানেই যাই না কেন, মানুষ আমাদের এভাবেই দেখে। মানুষ ভয়ে কথা বলতে চায় না।’

লুনা বলেন, ‘গুম পরিবারের সদস্য মানে যেন আমরাও অপরাধ করেছি। আমাদের স্বামীকে গুম করা হয়েছে, এ অপরাধ সরকারের নয়, যেন এ অপরাধ আমাদের। সুতরাং আমাদের ছেলে মেয়েরা চাকরি পাবে না, কোথাও কাজ পাবে না। আমাদের ছেলেমেয়েদের এ দেশে বাস করার অধিকার নেই। এ রকম একটা ভাবসাব বর্তমান সরকারের এবং তাদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের।’

স্বামীল গুমকে লুনা পরিকল্পিত বলেও দাবি করেন। বলেন, ‘গুম হচ্ছে সরকারের পরিকল্পিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী যারা মাঠের কর্মী, যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে, তাদের গুম করা হয়েছে-যাতে এর মাধ্যমে একটি মেসেজ দেয়া যে স্টপ হয়ে যাও। এগোলেই তোমারদের গুম করা হবে, খুন করা হবে। এ ধরনের একটি ভীতি সঞ্চার করেছিল, যাতে এই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারে, কেউ আন্দোলন করতে না পারে।’

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করে বলে মন্তব্য করেন ইলিয়াসের স্ত্রী লুনা।

তিনি বলেন, ‘একটি বিনা ভোটের নির্বাচন, আরেকটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন। এই দুটি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে ছিল। এটাতে তারা সফল হয়েছে। কিন্তু এভাবে কত দিন, সবকিছুরই তো একটা শেষ আছে।’

তাহসীনা রুশদীর বলেন, ‘সরকার অন্ধ হয়ে গেছে। গুমকে শিকার করতেই চায় না। কিন্তু অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ হয় না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, সেই দিন পর্যন্ত আল্লাহ যেন আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন। যেদিন এ সরকারের পতন দেখতে পারি এবং গুমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারটা যেন দেখে যেতে পারি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া। এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় নিখোঁজ সাইদুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান, পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি, নুরুজ্জামান জনির স্ত্রী মুনিয়া আক্তার, মনির হোসেনের ভাই ওবায়দুল্লাহ হোসেন তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

এ বিভাগের আরো খবর