বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোট নিয়ে পরামর্শ দিতে এসে সাংবাদিকদের মধ্যেই বিভেদ

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:২১

এটিএন বাংলা প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, ‘আজকে সংলাপে আমার সহকর্মী, বন্ধু, ভাইদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, আমি কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে আসলাম নাকি। এখানে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে পরামর্শ দিতে আসা সাংবাাদিকেদের মধ্যেই নানা বিষয়ে ভিন্নমতের পর একজন গণমাধ্যমকর্মী এর সমালোচনা করেছেন।

তিনি মনে করেছেন, সেই সংলাপে একটি পক্ষ আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলছে, একটি পক্ষ কথা বলছে বিএনপির হয়ে।

এরপর অন্য একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, সংলাপে পরামর্শ দিতে আসার পর নিজেদের এই ‘চেহারা’ দেখানো উচিত নয়।

এর মধ্যে প্রধান যে পরামর্শটি উঠে আসে, সেটি হলো আস্থার অর্জন। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা থাকলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে-এটি বলেছেন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী।

অবশ্য এমন মন্তব্যও আসে যে, কেউ নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে ভোট বর্জন করলে সে ক্ষেত্রে আসলে কমিশনের কিছুই করার থাকে না। এর বিপরীতে আবার কেউ কেউ বলেছেন, সব দলকে ভোটে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়িার সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সংলাপ হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিুবল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাকি চার কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এটিএন বাংলা প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, ‘আজকে সংলাপে আমার সহকর্মী, বন্ধু, ভাইদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, আমি কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে আসলাম নাকি। এখানে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে।

‘গণমাধ্যমেও এই ধরনের বিভক্তি আছে, আপনারা নিশ্চয় সেটি আগের থেকে জানেন। এখন আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিভক্তি থাকবে, তবে আপনাদের মধ্যে যেন বিভক্তি না থাকে।’

জ ই মামুনের বক্তব্যের আগে একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বক্তব্য শেষ করলেও আবার মাইক হাতে তুলে নেন। তখন তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণ (নির্বাচনে সব দলের) কীভাবে ওনারা (নির্বাচন কমিশন) নিশ্চিত করবে?’

জ ই মামুন তখন আবার কথা বলেন। একই সময়ে আরেকজন সাংবাদিক তার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। এমন সময়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল জানান, ‘আমরা পরামর্শ দিতে এসেছি। আমাদের যদি এই চেহারা দেখেন তারা…।’

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এর আগে মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘৫০ বছরে নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হয়েছে। কখনও কখনও দলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ইসিকে বিতর্কিত করেছে। এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আপনাদেরকে এটার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে নির্বাচনে আনা বা না আনা, দল ভাঙার কাজ তো আপনাদের না। চোখ-কান বন্ধ করে সোজা হাঁটেন। বড় দলগুলো না এলে একতরফা হয়ে যায়। এর বাইরে কাউকে আনা বা না আনা আপনাদের কাজ না।’

আরও যা পরামর্শনির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আপনারা হতাভাগা প্রতিষ্ঠানে এসেছেন, সেটা একটা সাহসের জায়গা। আস্থার সংকট দূর করা দরকার, ইভিএম আস্থার সংকট দূর করা দরকার।’

গ্লোবাল টিভির এডিটর ইন চিফ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘নিজেদের ভেতর সংহতি থাকা দরকার। একজন নির্বাচন কমিশনার সব সময় নির্বাচন কমিশনের বাইরে এসে কথা বলেছেন। এটা সব সময় নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের মনে ভালো বার্তা দেয় না।’

অতীতে ভোটে অনিয়ম নিয়ে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ারও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘বেশ কিছু নির্বাচন অত্যন্ত সহিংসতার মধ্যে রয়েছে। ক্ষমতার ব্যবহার, দৃঢ়তার অভাব দেখেছি। সংসদের উপ-নির্বাচনের জটিলতা হয়েছে। নির্বাচনী অনিয়ম হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ না করার মনোভাবও দেখতে পাইনি।’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরুজ খালিদী বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে আসবে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস করতে হবে, গণমাধ্যমের আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।

‘আরেকটি কথা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এটিই আপনাদের পেশাগত জীবনের শেষ অ্যাসাইনমেন্টে। এরপর হয়ত আর কোনো রাষ্ট্রীয় কাজ পাবেন না। এটি মাথায় রেখে কাজ করলে ভালো কাজ করতে পারবেন।’

বাংলাভিশনের সাবেক কর্মী মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় সরকারের কাঠামোটা কেমন হবে, বিষয়টি রাজনৈতিক দলেও যেহেতু এটা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেহেতু আপনারা অভিমত দিতে পারেন।’

নির্বাচন করতে ইউরোপ-আমেরিকার সহযোগিতা নেয়ারও পরামর্শ দেন এই গণমাধ্যমকর্মী। সেই সঙ্গে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার কাজ এখন থেকেই শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি।

নিউজ টোয়েন্টিফোরের এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন মিথ্যা প্রচার, অপপ্রচার রোধে নজরদারি করতে হবে।’

ভোট নিয়ে আস্থা ফেরাতে বড় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

যারা পরাজিত হন তারা নির্বাচন কমিশনকে একটা দোষ দিয়ে দেন জানিয়ে মাছরাঙ্গা টেলভিশন হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘ইলেকশন কমিশনকে কিছু কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।’

কথায় কথায় ইসিকে পদত্যাগের কথা বলা হয়- এ রকম পরামর্শ শুভ চিন্তা নয় বলে মনে করেন বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘ভোটে আসা না আসা দলগুলো নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়। জামাই আদর করে কাউকে ডেকে আনা হবে না। যে দলের নীতি ঠিক করেছেন ভোট আসবে না; তাদের আপনি আনবেন কী করে?’

নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, চাইলে সেই ক্ষমতা বলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। তবে সেই ক্ষমতা তারা ব্যবহার করতে চায় কি-না, এটা একটা বড় প্রশ্ন।’

বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় সংকট হল আস্থার সংকট। মানুষ নির্বাচন কমিশনের কথাবার্তায় বিশ্বাস করে না। গত দুটি নির্বাচনে এই বিশ্বাস শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি প্রত্যেক নাগরিককে আপনি ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে বুঝব আপনি সফল। এ বিষয়টি আপনি অর্জন করতে পারবেন কি না, তাই মুখ্য বিষয়।’

দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার দায়িত্বভার গ্রহণের পর নিজেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কমিশন সভা না করেই সংলাপে বসে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। গত মাসে দুই দফা সংলাপে বসে ইসি। তবে তৃতীয় দফা সম্পাদকদের সঙ্গে সংলাপের আগেই নিজেদের প্রথম কমিশন সভায় বসেন তারা।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত মাসে ১৩ মার্চ প্রথম দফায় ৩০ শিক্ষাবিদকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে ১৭ জনই সাড়া দেননি। দ্বিতীয় দফার সংলাপে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে একজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

ওই পর্যায়ে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন ১৯ জন। তৃতীয় দফায় সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে ২৩ সম্পাদকসহ ৩৪ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। ২৩ জন সাংবাদিক এ ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। ১১ জন আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। আজকের সংলাপে ৩৯ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেখানে ২৭ জন সাংবাদিক সাড়া দেন।

এ বিভাগের আরো খবর