ঢাকার সাভারের রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ আহত শ্রমিকদের অর্ধেক এখনও বেকার। শারীরিক অক্ষমতার কারণে এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মানসিক যাতনা বয়ে বেড়াচ্ছেন ১০ শতাংশ।
অবশিষ্ট ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছরে বেঁচে যাওয়া ২০০ শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ। এই জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এতে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৫৬.৫ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। তারা কোমর, মাথা, হাত-পা এবং পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
আগের বছরগুলোতে এমন জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখা গেলেও, এবার অবনতির চিত্র উঠে এসেছে।
এ বছরের জরিপে বলা হয়েছে, ৩৩ শতাংশ শ্রমিকের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০.৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।
গত বছর মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২.৫ শতাংশ শ্রমিক। এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০.৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।
জরিপ অনুসারে, ১৪.৫ শতাংশ শ্রমিক আদি পেশা পোশাক কারখানায় ফিরে গেছেন এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
অনেকেই পেশা বদল করে গৃহস্থালি কাজ, দিনমজুরি, কৃষিকাজ এবং গাড়িচালকের পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তাদের আয় ব্যাপকভাবে কমেছে বলেও জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপে অংশ নেয়া ২০০ জনের ১২৭ জন বলেছেন, মহামারির সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো টাকা তাদের কাছে ছিল না। ১০৩ জন জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ৪৫ জন বলেছেন, তারা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি।
৪৬.৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালীন তাদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ নিতে হয়েছে।
একশনএইডের জরিপে আরও দেখা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় ৫ হাজার টাকার কম। ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে আয় রয়েছে।
৩৫ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি। ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি।
তবে আয়ের বেশিরভাগই খরচ হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে।