ঈদের বাকি নেই খুব বেশি দিন। এবার লম্বা ছুটি থাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাড়ি ফেরার, কিন্তু যে সড়ক ধরে তারা বাড়িতে যাবেন, তার উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় ব্যাপক ভোগান্তির শঙ্কা তৈরি হয়েছে ঈদযাত্রায়।
ঈদ সামনে রেখে ভোগান্তির এ শঙ্কা করছেন কুষ্টিয়ামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। তাদের ভাষ্য, মহাসড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করার কাজ চলতে থাকায় এমনিতেই গাড়ির গতি ধীর। ঈদে বাড়তি চাপে সে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এমন বাস্তবতায় ভোগান্তি কমাতে নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
সড়ক সংস্কারজনিত কারণে ভোগান্তি দূর করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনায় বসেছে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটি। জনভোগান্তি কমাতে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেছেন তারা।
নাগরিক কমিটির চাপের মুখে ঈদের সময় কাজ বন্ধ রেখে মহাসড়কে চলাচল উপযোগী রাখার কথা জানিয়েছে সওজ।
রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে যান জেলা নাগরিক কমিটির নেতারা। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করায় প্রকল্পের সমালোচনা করেন তারা। একই সঙ্গে বিকল্প উপায়ে জনভোগান্তি কমাতে কিছু পরামর্শও দেন তারা।
প্রকল্পকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুস্তানজিদ বলেন, ‘মহাসড়কের পাশের সড়কগুলো সংস্কার করে তাতে ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মহাসড়কে চাপ কমবে।’
কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা পরামর্শ দেন, সংস্কারকাজের স্থানে সিটিজেন চার্টার টানিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে নাগরিক কমিটি তাদের পাশে থাকবে।
ওই সময় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সামসুল ওয়াসে, আব্দুল খালেক, কাদেরী শাকিল, আমানুর আমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তাদের ভাষ্য, কীভাবে জনভোগান্তি কমানো যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ঈদযাত্রায় যাত্রীরা যেন ভোগান্তিতে না পড়ে, সেটি বিবেচনা করতে হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার কাজ চলছে।
এর মধ্যে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে। এক পাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশে গর্ত করে মহাসড়ক মজবুতের কাজ করায় কোনোমতে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের রানাখড়িয়া গোরস্থানের পাশে গভীর গর্ত করে বেজমেন্ট তৈরির কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গর্ত বেশি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেটের প্রকল্প পরিচালক আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে বালু, পরে ইট-সুড়কি ও শেষে পাথরের লেয়ার তৈরি করে তার ওপর পিচঢালাই দেয়া হবে। এভাবে কাজ করলে মহাসড়ক টেকসই হবে।
সড়ক মজবুত করতে গিয়ে গভীর গর্ত করে কাজ করায় এর এক প্রান্তে যানবাহন আটকে রেখে অন্য প্রান্তের যানবাহন ছাড়তে হচ্ছে। এতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ব্যস্ততম এ মহাসড়কে সারাক্ষণই যানজট লাগছে।’
বাসচালক সোহেল রানা বলেন, ‘এখনই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে বাস নিয়ে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
ট্রাকচালক ইয়াজউদ্দিন বলেন, ‘বাইপাস থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত সড়কে কোথাও গর্ত হয়ে আছে, কোথাও লেনের মতো দাবা। এখানে স্টিয়ারিং ধরে রাখা কঠিন। একদিক থেকে টান দিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যায়। যানজট তো আছেই। এই রোডে আসা মানে জীবন হাতে নিয়ে আসা।’
যাত্রী আয়েশা বলেন, ‘গাড়িতে বসে ঝাঁকিতে ও গরমে জীবন কয়লা হয়ে যাচ্ছে। ৪০ মিনিটের রাস্তা পার হতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঈদে কি হবে জানি না।’
সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী আবদুল্লাহ বলেন, ‘যানবাহনগুলো ডানে-বামে টলতে টলতে যাচ্ছে। কখন দুর্ঘটনা ঘটে বলা মুশকিল।’
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেজমেন্টে কয়েকটি স্তর রাখায় এ কাজ বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ কাজের মেয়াদ আছে। তার আগেই শেষ করার চেষ্টা চলছে।
‘ঈদের আগে ভোগান্তি কমাতে নির্মাণকাজের গর্ত বন্ধ করে যানবাহন চলাচলের জন্য মহাসড়কের পুরোটা চালু রাখা হবে। ২৫ রোজার আগেই কাজ বন্ধ রাখা হবে।’