উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাব পড়েছে পদ্মায়ও। গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে উজানের পানি আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা চরাঞ্চলের অন্তত এক হাজার একর জমির পাকা বোরো ধান ও আউশ ধান পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়েছে। পদ্মা চরের নিম্নাঞ্চলে আবাদ করা হয়েছিল এসব ধান।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মার পানি এখন স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৩৬ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও তা গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৭১ মিটার উচ্চতায় ছিল। পানি কমতে থাকলেও ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের বিবরণী দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে সে অনুযায়ী কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। তবে ঠিক কতজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এই মুহূর্তে সে হিসেব নেই তাদের কাছে।
কৃষকরা জানান, পৌষ মাসে উপজেলার বিভিন্ন পদ্মা চর এলাকার নিম্নাঞ্চলের অল্প পানি জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়। এছাড়া চরাঞ্চলের শত শত একর জমিতে করা হয় লেপী আউশ ধান। চলতি মাসে এসব ধান পেকে মাঠের পর মাঠ সোনালী বর্ণ ধারণ করেছিল। কিন্ত মাত্র কয়েক দিনের আকস্মিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এসব কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।
উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে পদ্মা চরের চরকল্যানপুর মৌজা, দিয়ারা গোপালপুর মৌজা, চরঝাউকান্দা ও চর মির্জাপুর মৌজার প্রায় ৩০০ একর, চরহরিরামপুর ইউনিয়নে পদ্মা চরের ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী গ্রাম, আরজখার ডাঙ্গী ও চর শালেপুর মৌজার প্রায় ৪০০ একর, গাজীরটেক ইউনিয়নের মাঝি ডাঙ্গী, বিন্দু ডাঙ্গী, বঙ্গেশ্বর ডাঙ্গী, জয়দেব সরকার ডাঙ্গী গ্রাম, চরহোসেনপুর মৌজা ও হাজীগঞ্জ মৌজার প্রায় আড়াই শ একর এবং চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের পদ্মা পারের বালিয়া ডাঙ্গী গ্রাম, ফাজেলখার ডাঙ্গী, এমপি ডাঙ্গী, আঃ গফুর মৃধা ডাঙ্গী, কামার ডাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গা গ্রামের ১০০ একর জমির ধান জোয়ারের পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়েছে।
উপজেলার চরকল্যানপুর মৌজার কৃষক এজিএম বাদল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জোয়ারে পদ্মার পানি বেড়ে মাত্র তিন দিনে আমার সাড়ে ৭ বিঘা জমির পাকা ধান ডুবে গেছে। সারা বছর যা করছি, আল্লায় আমার সব নিয়া গেছে।’
কৃষক শাহজাহান মুন্সী বলেন, ‘পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কাটার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে মজুর নিছি। সারাদিন তারা মাত্র ১৯ আঁটি পানির নিচের ধান কাটছে। ধান কাটতে গিয়ে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হইছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনর বলেন, ‘পদ্মার চরের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের বিবরণী তৈরি আমরা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য কোনো বরাদ্দ আসলে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে হঠাৎ পদ্মায়ও পানি বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দশমিক ৩৫ মিটার কমেছে। ঢলের পানি এ অঞ্চল দিয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করায় এ প্রভাব। আশা করছি, পাহাড়ি বৃষ্টি কমলে এ পানিও কমবে।’