চুয়াডাঙ্গা সদরে এক নারীর আল্ট্রাসাউন্ডে গর্ভে যমজ সন্তান আছে বলে রিপোর্ট দেয়া হলেও প্রসব হয় একটি সন্তানের। গর্ভাবস্থায় সরকারি-বেসরকারি দুই হাসপাতালে তিনবার আল্ট্রাসাউন্ড হয় ওই নারীর। সবগুলো রিপোর্টেই যমজ সন্তান গর্ভে আছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই নারীর অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক জানান, গর্ভে একটি সন্তানই ছিল।
সদর হাসপাতালে আল্ট্রাসাউন্ড করা চিকিৎসক জানান, সেখানে আল্ট্রাসাউন্ডে একটি সন্তানই দেখা যায়। তবে অন্তঃসত্ত্বার স্বজনদের চাপে পড়ে তিনি রিপোর্ট পরিবর্তন করেন, যমজ সন্তানের কথা লিখে দেন।
কারও চাপে পড়ে রিপোর্ট পরিবর্তন করা ঠিক নয় জানিয়ে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বলেন, ‘তিনি (আল্ট্রাসাউন্ড করা চিকিৎসক) ছোটো মানুষ, ভুল করেছেন।’
উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের মসজিদপাড়ার রজনী খাতুন রোববার দুপুরে সদর হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রজনীর স্বামী রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমার স্ত্রী ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি জীবননগর উপজেলা শহরের মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে তার আল্ট্রাসাউন্ড করেন নাজমুল হাসান। আমার স্ত্রীর গর্ভে দুটি যমজ বাচ্চা আছে বলে জানান চিকিৎসক।
‘৩৪ সপ্তাহ ৪ দিন পর গত ৩১ মার্চ তাকে আবার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। তখনও একই রিপোর্ট দেন এফ আফরোজ। গতকাল শনিবার প্রসববেদনা শুরু হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানে আজ সকালে আল্ট্রাসাউন্ড করেন নুরজাহান খাতুন রুমি। এখানেও একই রিপোর্ট দেয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে সিজার করেন আকলিমা খাতুন। তিনি জানান, গর্ভে একটাই ছেলেসন্তান পাওয়া গেছে।’
রাসেল মিয়া আরও বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুবার আল্ট্রাসাউন্ড করে একই রিপোর্ট দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের আগে একই রিপোর্ট দিয়েছে সদর হাসপাতাল। তাহলে অস্ত্রোপচারের পর কীভাবে একটি সন্তান পাওয়া গেছে বললেন চিকিৎসক? আর একটা সন্তান গেল কোথায়? এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করব।’
সদর হাসপাতালের ওই আল্ট্রাসাউন্ডের রিপোর্টে দেখা গেছে, কলম দিয়ে কাটাকুটি করে যমজ সন্তানের তথ্য লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে আল্ট্রাসাউন্ড করা চিকিৎসক নুরজাহান বলেন, ‘রজনী খাতুনের আল্ট্রাসাউন্ড করে একটি বাচ্চাই পাওয়া গেছে, কিন্তু রোগীর লোকজন দুটো বাচ্চা আছে দাবি করলে পরে আমি আরেকটি সন্তান আছে লিখে দিয়েছি।’
চিকিৎসক রোগী বা স্বজনদের চাপে পড়ে রিপোর্ট বদলাতে পারেন কি না জানতে চাইলে সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে। চাপে পড়ে লিখেছে। সে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমি তাকে বলেছি, তুমি কেন এটা লেখলা? সে বলেছে চাপে করেছে। এটা সে ভুল করেছে। এটা সে করতে পারে না।
‘আজকে তো অফিস শেষ, কাল আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব।’
আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাকির আহমেদ শাহীন। তিনি বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমার এখানে যারা আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট দিয়েছেন তারা প্যারামেডিক্যাল ডাক্তার।’
ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন সাজ্জাৎ হাসান জানান, এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর হাসপাতালের আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট বদলানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দেখবেন। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি না নিলে আমরা পরে তদন্ত কমিটি করব।’