বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জরিমানা করে ‘আমমিশ্রিত’ নামে জিলাপি বেচার অনুমতি

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ২১:২৬

জিলাপিতে কাঁচা আম ব্যবহার করা হয় না এমন নয়। তবে পাঁচ কেজি খামিরে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আম ব্যবহার ‘পর্যাপ্ত নয়’ এমন কথা বলে ভোক্তা অধিকার জরিমানা করলেও কী পরিমাণ আম ব্যবহার করতে হবে- সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ২৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া কর্মকর্তা হাসান আল মারুফ। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতেরও এ বিষয়ে ধারণা নেই। যে ফুড কালার ব্যবহার করা হতো, সেটির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি সংস্থা। সেই রং ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়ে তাকে ‘ক্ষতিকর’ বলছেন জেলা প্রশাসক।

দুই দফা জরিমানা করার পর রাজশাহীর আলোচিত মিষ্টির দোকান ‌‘রসগোল্লা’কে কাঁচা আমের জিলাপি বানানোর অনুমতি দিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক। তবে বলে দিয়েছেন জিলাপির নাম বলতে হবে ‘আমমিশ্রিত জিলাপি।’

সায়েন্স ল্যাবরেটরি বলে পরিচিত বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ- বিসিএসআইআর এর অনুমোদন দেয়া রং কে ‘ক্ষতিকর’ উল্লেখ করে সেটি ব্যবহার না করার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।

এই প্রতিষ্ঠানটিকে গত শুক্রবার প্রথমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও পরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে।

এক ঘণ্টার ব্যবধানে একই প্রতিষ্ঠানকে দুই দফা জরিমানাই কেবল নয়, জরিমানার পেছনে কারণও স্পষ্ট নয়।

জিলাপিতে কাঁচা আম ব্যবহার করা হয় না এমন নয়। তবে পাঁচ কেজি খামিরে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আম ব্যবহার ‘পর্যাপ্ত নয়’ এমন কথা বলে ভোক্তা অধিকার জরিমানা করলেও কী পরিমাণ আম ব্যবহার করতে হবে- সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ২৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া কর্মকর্তা হাসান আল মারুফ।

তিনি অভিযান চালিয়ে যেতে না যেতেই প্রতিষ্ঠানটিতে হানা দেয় জেলা প্রশাসনের আরেকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত যার নেতৃত্বে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় দাস।

তিনি ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও ঠিক কী অভিযোগে এই জরিমানা, সেটি স্পষ্ট নয়। জরিমানার স্লিপে কাটাকাটিও করা হয়েছে। প্রথমে ওজন অধ্যাদেশের একটি ধারা লেখা হলেও পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আরেকটি ধারার কথা উল্লেখ করা হয়, যেটি ব্যবহার করা হয় ভেজালের ক্ষেত্রে।

তবে প্রতিষ্ঠানটিতে ভেজাল দেয়ার কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। বরং সেখানে যে ফুড কালার ব্যবহার করা হয়, সেটির বিএসটিআই অনুমোদন নেই-এমন কথা বলে এসেছেন ম্যাজিস্ট্রেট।

তবে ফুড কালারের অনুমোদনের বিষয়টি বিএসটিআইয়ের আওতাধীন নয়। সেটি দেখে বিসিএসআইআর, যেটির অনুমোদনপত্র ছিল ‘রসগোল্লা’র। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সেই অনুমোদনপত্র দেখতেও চাননি।

এ নিয়ে নিউজবাংলার প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা। তিনি এক পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে জিলাপি তৈরির কথা বলেন। তবে জিলাপির অনুমোদন আবার বিএসটিআইয়ের আওতাভুক্ত নয়।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার জিলাপি বানানো বন্ধ করে দেয় রসগোল্লা। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে পর পর দুই বার জরিমানা আর সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠে, আসলে এই অভিযানের নেপথ্যে কী?

এর মধ্যে রোববার ‘রসগোল্লা’কে কাঁচা আমের জিলাপি বানানোর মৌখিক অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। তবে বিসিএসআইআর যে ফুড কালারকে নিরাপদ ও বৈধ বলেছে তাকে ‘ক্ষতিকর’ উল্লেখ করে সেটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন তিনি।

রসগোল্লার স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে একই দিনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সরকারি সংস্থা অভিযান চালিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। এ বিষয়ে কথা বলতে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে যাই।

‘জিলাপি তৈরিতে যে ফুড গ্রেড ব্যবহার করি তা যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেই সনদও নিয়ে গিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসককে আমের জিলাপি বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানিয়েছি।

‘জেলা প্রশাসক বলেছেন, সবুজ রং নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এটা যেন আমরা ব্যবহার না করি। এটা না দিয়ে আমরা আম দিয়ে জিলাপি করতে পারব।’

অনুমতি পাওয়ায় সোমবার থেকে আবার জিলাপি বানানো শুরু করবেন বলেও জানান রুবেল। বলেন, ‘জিলাপিতে আমরা আর কোনো রং দিতে চাই না। আগে অনুমোদিত যে রং ব্যবহার করতাম সেটিও আর ব্যবহার করতে চাই না।’

জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলও রুবেলের তথ্য নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের আমি বলে দিয়েছি, তোমরা যা দিয়ে মিষ্টি বানাবে বানাও। তবে রং দেয়া যাবে না। তোমরা বলবে যে এটা আমমিশ্রিত জিলাপি। কোনো কেমিক্যাল দেয়া যাবে না। যে সবুজ কালারটা দেয়া হয় ওইটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, ওইটা দেয়া যাবে না।’

বিসিএসআইআর যে রংকে নিরাপদ বলেছে, সেটিকে কীভাবে ক্ষতিকর বুঝলেন- সেই ব্যাখ্যা অবশ্য জেলা প্রশাসক দেননি।

গত বছরের শেষ দিকে ‘রসগোল্লা’ নানা স্বাদের মিষ্টি নিয়ে এসে আলোচিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচার পায় খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা। আরও আছে পাকা আমের, কমলার মিষ্টি, কাঁচা মরিচের রসগোল্লা।

এবার রোজায় তারা নিয়ে আসে কাঁচা আমের জিলাপি। আগের সবগুলো পণ্যের মতো এটিও আলোড়ন তোলে। দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এটি প্রতিবেদন আকারে উঠে আসে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি আলোচিত হয়। কাঁচা আমের জিলাপির পক্ষে- বিপক্ষে দুই ধরনের মতামতই আসতে শুরু করে। এরই মধ্যে শুক্রবার দুই দফা অভিযান চালানো হয় রসগোল্লার উপশহর বিক্রয়কেন্দ্রে।

এ বিভাগের আরো খবর