বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ’

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ২১:১২

করোনার পরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মহীনতা বেড়েছে, আয় কমেছে, মানুষের সঞ্চয় ভেঙেছে। আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এটাকে মুখের কথা বললে হবে না। এটার জন্য লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হবে।

নিম্ন আয়ের মানুষদের কথা মাথায় রেখে বাজেট ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটি উদ্যোগ, যার সমন্বয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি জিডিপির প্রবৃদ্ধির বদলে কর্মসংস্থার বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি রোধের ওপর জোর দেয়ার তাগিদও দিয়েছেন।

রোববার আসন্ন বাজেট নিয়ে ‘জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে এই পরামর্শ দেন তিনি।

সেমিনারে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন ১৫ জন নাগরিক বাজেটে নাগরিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সুর্নিদিষ্ট প্রকল্প ও বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট এমন একসময়ে দেয়া হচ্ছে যখন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, পণ্যের চড়া দাম, একই সঙ্গে দেশের ভেতরও মূল্যস্ফীতির কড়াঘাতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের।

এ অবস্থায় সরকারকে এই বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, বাজেটকেন্দ্রিক আগাম নীতি কাঠামোর খসড়া জনসমক্ষে দেয়া হলে তার ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ সুচিন্তিত মতামত দিয়ে বাজেটকে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলতে পারে।

বাজেট দেওয়ার আগেই একটি নীতি কাঠামো, খসড়া প্রকাশ, বিভিন্ন জনমানুষের মতামত নেয়া এবং তার আলোকে বাজেট প্রণয়নের পরামর্শও দেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, ‘বাজেট যখন একবার প্রস্তাবিত হয়ে যায়, তখন এটার বড় ধরনের পরিবর্তন, আর্থিক পরিবর্তন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুতরাং বলতে চাচ্ছি, এবার যেন সাধারণ বাজেট না আসে অন্যান্য সময়ের মতো।

‘যদি জুনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়, তাহলে অন্তত আগামী মাসের কোনো একসময়ে খসড়া প্রকাশ করা হোক, যেন সাধারণ মানুষ এতে মতামত দিতে পারে।’

খসড়া বাজেটের সঙ্গে গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের যেসব বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সেটা বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান উল্লেখের কথাও বলেন দেবপ্রিয়। বলেন, ‘এটা থাকলে বাজেটের আলোচনা যুক্তিযুক্ত, তথ্যনির্ভর ও অনেক বেশি বাস্তববাদী হবে। এটাই আমার প্রথম প্রস্তাবনা।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবনা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাদের খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়েছে, সেগুলো সমন্বয় করে একটি অভিন্ন তথ্যভান্ডারের তালিকা প্রকাশের পরামর্শ দেন। বলেন, ‘এটা যদি প্রকাশ করা হয় তাহলে সরকারের যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করার আগ্রহ সেটাকে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ভেতরে আনা যাবে।’

এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন আর কত খরচ হয়েছিল তা জানার অধিকার জনগণের আছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘এটা করা সম্ভব। সরকারের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত, যেটার মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ব্যবস্থাপনা করে থাকে সেটার মাধ্যমে এটার স্বচ্ছতা নিয়ে আসা দরকার। আসলেই পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ তার কাছে পৌঁছেছে কি পৌঁছেনি, সেটা বাজেটের আগেই পরিষ্কার হওয়া যাবে।’

বাজেটে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদদুটি বিষয় আগামী বাজেটের জন্য লক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘করোনার পরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মহীনতা বেড়েছে, আয় কমেছে, মানুষের সঞ্চয় ভেঙেছে। আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

‘এটাকে মুখের কথা বললে হবে না। এটার জন্য লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হবে। কত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, কত লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং এটা সরকারকে করতে হবে তা কেউ বলছে না। ব্যক্তি খাতে কত হবে, স্বউদ্যোগে কত হবে, আন্তকর্মসংস্থান কত হবে, দেশের বাইরের রেমিট্যান্স আয়কারী হিসেবে প্রবাসীরা কত হবে, এটা নির্ধারণ করতে হবে।’

জিডিপির প্রবৃদ্ধির বদলে কর্মসংস্থান লক্ষ্যমাত্রাই আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেবপ্রিয়। বলেন, ‘মানুষের আয় নিশ্চিত না করতে পারলে হবে না। জিডিপি বেড়েছে যেমন, বৈষম্যও বেড়েছে তেমন। সবার আয় তো এক রকম হবে না।’

দ্বিতীয় যে লক্ষ্যের কথা তিনি বলেন, সেটি হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। যে হারে ব্যয় বেড়েছে, সেই হারে আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। সুতরাং সরকারকে প্রত্যক্ষ সহায়তা, খাদ্যসহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে কীভাবে এই মানুষগুলোর জীবন একটু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করা যায়, তা আগামী বাজেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।’

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে টিসিবির মাধ্যমে খাদ্য বিক্রি, প্রণোদনা কাঠামো বাড়ানো, সরকারের সাধারণ ব্যয় বাড়ানো, ব্যক্তি খাতে কর-শুল্ক সুবিধা দেয়ার পরামর্শ দেন দেবপ্রিয়।

এ বিভাগের আরো খবর