বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অজানা রোগে মরছে গরু, দুগ্ধ গ্রামে আতঙ্ক

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ২০:০৭

তিলকান্দি দুগ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৭০-৮০টা গরু ১৫/২০ দিনের মধ্যেই মরে গেল। কী রোগ হইল, আমরা জানতেও পারলাম না। ডাক্তাররা কোনো একটি রোগের নাম বললে আমরা চিকিৎসা তো নিতে পারতাম।’

শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি গ্রামের সব বাড়িতেই অন্তত একটি হলেও গাভি আছে। একসময় অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী হলেও এই গাভি পালনের মধ্য দিয়েই গ্রামটির বাসিন্দারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

গ্রামটিতে একে একে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় ২৪৭টি দুগ্ধ খামার। কিন্তু তর্কাসহ অজানা এক রোগে একের পর এক গরুর মৃত্যুতে এখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন খামারিরা।

গরুর অসুখ-বিসুখে প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনকে ডেকে কোনো সমাধান পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সাহায্য চাইতে গেলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।

খামারের মালিকরা দাবি করেছেন, গত এক মাসে তাদের অন্তত ৭০-৮০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে; যার মূল্য প্রায় দুই-তিন কোটি টাকা।

সরজমিনে জানা গেছে, দুগ্ধ গ্রাম হিসেবে পরিচিত ওই গ্রামের এক বাড়িতেই ১৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একটি দুটি করে গরু মরেছে অনেক বাড়িতেই। এই বাড়ির বাসিন্দা মোস্তাফিজুর বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ১৫টা গরু মারা গেছে এই কয়দিনে। এর মধ্যে আমার নিজেরই তিনটা। ডাক্তার খবর দিলেও ঠিকমতো আসেন না।’

কারও কারও শেষ সম্বল গরুটির মৃত্যু হওয়ায় এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। বর্তমানে অবশিষ্ট গরুগুলো নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন দুগ্ধ গ্রামের কৃষকরা। ঋণ করে খামার করায় তা পরিশোধ করতেও রয়েছে দুশ্চিন্তা।

কলেজছাত্র নাজিম মিয়া বলেন, ‘আমি কলেজে পড়ার পাশাপাশি ঋণ নিয়ে দুটি গরু পালতাম। কিন্তু অজানা অসুখে আমার দুইটা গরুই শেষ। এখন ঋণ কেমনে শোধ করব। চিকিৎসার অভাবেই গরুগুলো মরেছে।’

মো. মোক্তার আলী বলেন, ‘আমার ছোট একটা খামার। অনেক কষ্টে খামারটা করেছি। আমার একটা গরু ডাক্তার দেখাইয়া বাসায় নিয়ে আসার পরই মারা গেছে।

মোক্তার জানান, গরুর চিকিৎসককে বাসায় নিয়ে আসতে গেলে তিন/চার হাজার টাকা দেয়া লাগে।

তিলকান্দি দুগ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৭০-৮০টা গরু ১৫/২০ দিনের মধ্যেই মরে গেল। কী রোগ হইল, আমরা জানতেও পারলাম না। ডাক্তাররা কোনো একটি রোগের নাম বললে আমরা চিকিৎসা তো নিতে পারতাম।’

মোহম্মদ আলী জানান, কিছুদিন আগে চিকিৎসকরা খোরা রোগের টিকা দিলেও বিভিন্ন খামারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

ডাক্তাররা টাকা নেয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা ভালোই টাকা নেয়। আমার পাশের বাড়িতে অ্যালার্জি চিকিৎসা করাবার এসে ১৫০০ টাকা নিয়েছে। আমার একটা গরুর চিকিৎসা করতে এসে ২৫০০ টাকা নিয়েছে। ডাক্তার ফি নিলেও সমস্যা থাকত না, যদি অসুখ ভালো হইয়া যাইত। এখন তো টাকাও নিল, গরুও মরল।’

তিলকান্দি দুগ্ধ সমিতির কোষাধক্ষ আব্দুর রহমান সজিব বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এসে আমাদের এই গ্রামকে দুগ্ধ গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করে। এখানে প্রতিটা পরিবারেই গরু আছে। সব দুগ্ধ গাভি। গাভিগুলোর দাম দুই থেকে চার লাখ টাকা। কিন্তু গত এক মাস ধরে তিলকান্দি গ্রামের প্রত্যেক খামারির ১/২টা করে গরু মারা যাচ্ছে। এতে আমরা খুব আতঙ্কে আছি।’

এদিকে এক বাড়িতেই ১৫টি গরু মারা যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পলাশ কান্তি ধর জানান, তাদের কাছে ওই বাড়ির ৪টি গরুর মৃত্যুর হিসাব আছে। বাকি গরু কীভাবে মারা গেছে তার কোনো সঠিক তথ্য তাদের কাছে নেই।

এ ছাড়া টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি মিথ্যা। আমি একাই সদরের ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমার অফিসের লোকবল সংকট আছে।’

এদিকে শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনাদের মাধ্যমে শুনে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে এতগুলো গরু মারা যাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে এই কারণ খুঁজে বের করব। আমার অফিসের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর