বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা শুধুই ঢাকাকেন্দ্রিক

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:২৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা হয়। ঢাকার বাইরে এমনকি কোনো বিভাগেও এই রোগের চিকিৎসা নেই। ফলে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ রোগী।

অনিরাময়যোগ্য আরেক রোগের নাম হিমোফিলিয়া বা রক্তরোগ। দেশে প্রতিদিনই এ রোগে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এই রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।

গ্রামাঞ্চল এমনকি জেলা ও বিভাগীয় শহর পর্যায়েও হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেটুকু চিকিৎসা তার পুরোটাই রাজধানকেন্দ্রিক। এ অবস্থায় এই রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম এসব কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- চিকিৎসা সকলের অধিকার, অংশীদারত্ব, নীতি, অগ্রগতি।

হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই আলোচনায় খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত এই রোগে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ ঢাকা ছাড়া অন্য জায়গায় এর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ পরিস্থিতির সমাধান হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘হিমোফিলিয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা জানি। এই রোগে আক্রান্তদের অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এ জন্য সরকার আটটি বিভাগে হতে যাওয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য দেড় শ শয্যা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার আগে কিছুটা কাজ হলেও করোনার কারণে কাজ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রক্ত সম্পর্কিত রোগগুলো নিয়ে যে সহযোগিতা দরকার সরকার তা করবে।’

তবে দেশে বর্তমানে কতসংখ্যক মানুষ হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত সেই তথ্য নেই সরকারে হাতে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়৷ বাংলাদেশে সেই সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। আর হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত দেশে আড়াই হাজার রোগীকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পেরেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে এর চিকিৎসা হলেও ঢাকার বাইরে কোনো বিভাগেও এই রোগের চিকিৎসা নেই। এতে চরম বিপাকে পড়তে হয় রোগীদের।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢামেকের হেমোটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে কতসংখ্যক মানুষ রক্তরোগে আক্রান্ত সেই সংখ্যাটা আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। আবার যেসব রোগী চিহ্নিত হচ্ছে তাদেরও পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের ডিজ্যাবিলিটি (পঙ্গুত্ব) কমানো যাচ্ছে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ ব্যয়বহুল চিকিৎসা।

‘সরকারিভাবে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে ৯০ ভাগ ডিজ্যাবিলিটি কমানো সম্ভব। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে রোগী শনাক্ত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগীরা বাড়িতে নিজেরাই চিকিৎসা নিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’

বিএসএমএমইউ-এর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ বলেন, ‘সারা দেশে যত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা সেটি হচ্ছে না। বহুদিন ধরেই এই রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কথা বলে আসছি আমরা। বিলম্বে হলেও সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে যাতে এ রোগীরা সহজে ওষুধ পান তার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তি ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে।’

হিমোফিলিয়া সোসাইটি অফ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল অধ্যাপক বলেন, ‘রক্তরোগকে নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের লক্ষ্য৷ এ রোগীদের অগ্রাধিকার দেয়া হলেও তারা সে ধরনের সেবা পাচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে গ্রামের রোগীদের অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ‘স্থানীয় পর্যায়ে কেবল ব্লাড ট্রান্সফার পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করা হলেও ডায়াগনোসিস, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শনাক্তকরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। একটা বিভাগে এই রোগ ডায়াগনোসিসের ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ যাবে কোথায়? মানুষের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত এর সমাধান করতে হবে। জেলা সদর হাসপাতালে কীভাবে এ রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের যে কটি দিক রয়েছে হিমোফিলিয়া তার অন্যতম। আমাদের দেশে ১৪ হাজার রোগী আছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এটির উন্নতি করতে হবে। শুধু ডায়াগনোসিস করলেই হবে না, শনাক্তদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। ৮টি বিভাগে হতে যাওয়া নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে আলাদা বিভাগ থাকছে। সবচেয়ে দরকার একটি হিমোফিলিয়া কেয়ার সেন্টার। একই সঙ্গে নীতিমালা থাকাটাও জরুরি।’

আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে আশা করে তিনি বলেন, ‘হিমোফিলিয়া চিকিৎসায় একই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর