রাজশাহীর ভোক্তারা সোমবার থেকে ফের কাঁচা আমের জিলাপির স্বাদ নিতে পারবেন। ক্রেতার চাহিদা বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে পণ্যটি তৈরিতে ফিরছে বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান রসগোল্লা।
রসগোল্লার স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে একই দিনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সরকারি সংস্থা অভিযান চালিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। এ বিষয়ে কথা বলতে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে যাই।
‘জিলাপি তৈরিতে যে ফুড গ্রেড ব্যবহার করি তা যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেই সনদও নিয়ে গিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসককে আমের জিলাপি বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানিয়েছি।
‘জেলা প্রশাসক বলেছেন, সবুজ রং নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এটা যেন আমরা ব্যবহার না করি। এটা না দিয়ে আমরা আম দিয়ে জিলাপি করতে পারব।’
রুবেল জানান, শুক্রবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আম দিয়ে জিলাপি বানানো বন্ধ রাখার জন্য বলেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শনিবার জিলাপি বানাননি। সেদিন অনেকেই এসে জিলাপি খুঁজেছেন। তবে না পেয়ে ঘুরে গেছেন। তাদের বলেছিলাম আপাতত বন্ধ, তবে দুই-এক দিন পর যোগযোগ করতে অনুরোধ করা হয়। রোববার যেহেতু মৌখিক অনুমতি পেয়েছি সোমবার থেকে আবারও শুরু করা হবে।
রুবেল বলেন, ‘জিলাপিতে আমরা আর কোনো রং দিতে চাই না। আগে অনুমোদিত যে রং ব্যবহার করতাম সেটিও আর ব্যবহার করতে চাই না।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা এসে কথা বলেছে। তাদের আমি বলে দিয়েছি, তোমরা যা দিয়ে মিষ্টি বানাবে বানাও। তবে রং দেয়া যাবে না। তোমরা বলবে যে এটা আমমিশ্রিত জিলাপি। কোনো কেমিক্যাল দেয়া যাবে না। যে সবুজ কালারটা দেয়া হয় ওইটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, ওইটা দেয়া যাবে না।’
গত বছরের শেষ দিকে ‘রসগোল্লা’ নানা স্বাদের মিষ্টি নিয়ে এসে আলোচিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচার পায় খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা। আরও আছে পাকা আমের, কমলার মিষ্টি, কাঁচা মরিচের রসগোল্লা।
এবার রোজায় তারা নিয়ে আসে কাঁচা আমের জিলাপি। আগের সবগুলো পণ্যের মতো এটিও আলোড়ন তোলে। দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এটি প্রতিবেদন আকারে উঠে আসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি আলোচিত হয়। কাঁচা আমের জিলাপির পক্ষে- বিপক্ষে দুই ধরনের মতামতই আসতে শুরু করে। এরই মধ্যে শুক্রবার দুই দফা অভিযান চালানো হয়েছে রসগোল্লার উপশহর শোরুমে। বিকেলে সেখানে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জিলাপিতে আমের পরিমাণ কমের অভিযোগে জরিমানা হয় ২৫ হাজার টাকা। জরিমানার আদেশ দেয়া হাসান আল মারুফ বলেন, কাঁচা আমের জিলাপি বলে প্রচার করা হচ্ছে, আসলে এটা কাঁচা আমের না, কাঁচা আমের ফ্লেভারযুক্ত জিলাপি; যা এক ধরনের প্রতারণা। জিলাপির রং কখনও সবুজ হয় না। ফুড গ্রেড কালার ব্যবহার করে কাঁচা আমের জিলাপি বলা হচ্ছে।’
ভোক্তা অধিকারের এই অভিযান শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পরই সেখানে উপস্থিত হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় দাস।
তিনি জানান, রসগোল্লা কাঁচা আমের যে জিলাপি বিক্রি করছে, তার সঙ্গে কৃত্রিমভাবে সবুজ রং মেশানো হচ্ছে, যার কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এ জন্য ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
তবে, রসগোল্লার স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল বলেন, ‘যে রংটি আমরা ব্যবহার করি তার পক্ষে যথাযথ অনুমোদনের কাগজ কাছে আছে। এর পরও আমাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি অভিযান চালানো হলো একই ইস্যুতে একই পণ্যের বিষয়ে। এটা কতটা যৌক্তিক জানি না। এটা মনে হয় খ্যাতির বিড়ম্বনা। আমাদের এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক প্রচার হয়েছে।’
‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনে হয় নেগেটিভ আলোচনাটিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে ব্যবসায় মনোযোগী হতে চাই। আগামী দিনে নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে আবারও চমক দেখানো হবে।’