উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত ধনু নদের পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
রোববার বেলা ৩টায় দেখা গেছে, বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে নদীর পানি।
অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ঢলের পানির চাপে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলাসহ বেশ কিছু ফসলরক্ষা বাঁধ। যেকোনো সময় কীর্তনখোলা বাঁধ ভাঙার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেত্রকোণা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত ও খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ‘খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদের বিপৎসীমা ৪ দশমিক ১৫ মিটার। কিন্তু রোববার বেলা ৩টায় পরিমাপ করে দেখা গেছে তা ৪ দশমিক ৩০ মিটারে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
‘কোথাও কোথাও নদীটির পানি উপচে পড়েছে। এদিকে ধনু ছাড়াও জেলার কংস, মগড়া, উব্দাখালী ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃহস্পতিবার থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে হাওরাঞ্চলের নদীগুলোয়। ধনু নদের পানি বাড়ায় খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ ও মদনের হাওরাঞ্চলের অন্তত ২০টি বেড়িবাঁধ আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। কোনো কোনো বাঁধের প্রায় সমান সমান হয়ে গেছে নদীর পানি। এ কারণে বাঁধগুলোয় পানির চাপ পড়ছে।
‘বিশেষ করে ধনু নদের পাড়ে অবস্থিত খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা বাঁধটি খুব বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। স্থানীয় কৃষকরা মাটি, চাটাই, বাঁশ প্রভৃতি দিয়ে বাঁধটি কোনো রকমে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এ উপজেলার সিংহভাগ বোরো ফসলই সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁধটির ওপর নির্ভরশীল।’
নদ-নদীর পানি বাড়ায় উঠতি বোরো ফসল নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওর উপজেলাগুলোর কৃষক। অনেকে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন।
খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর সেখানকার ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে রোববার নাগাদ ৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে ব্রি-২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান এখনও পাকেনি। সেগুলো পাকতে আরও সপ্তাহখানেক দরকার।’
খালিয়াজুরীর জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন, পুরানহাটির কৃষক শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেছেন, ‘কৃষি বিভাগের এ হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। বেশির ভাগ জমির ধান এখনও পাকেনি। তাই অর্ধেক জমির ধানও এখনও কাটা হয়নি।
‘ঢলের পানি বাড়তে থাকায় কিছু কৃষক কাঁচা ধান কেটে খোরাকি জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। কাঁচা ধান কাটলেও খুব একটা লাভ হবে না। চিটা হয়ে যাবে।’
জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমানের আশঙ্কা, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় আর কোনো কিছুতেই কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে অথবা বাঁধ উপচে ফসলি হাওরগুলোয় পানি ঢুকে যাবে। যদি এমনটি হয়, তাহলে এক-দুদিনের মধ্যেই সবগুলো হাওর তলিয়ে যাবে। এখন কেবল আল্লাহই ভরসা।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ‘নদীর পানি বাড়লেও কোনো বাঁধ এখনও ভাঙেনি। বাঁধ রক্ষায় আমরা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
খালিয়াজুরীর ইউএনও এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধনুর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলরক্ষা বাঁধগুলোয় পানির চাপ খুব বেড়েছে। সমস্যা হচ্ছে কীর্তনখোলা হাওরের বাঁধ নিয়ে।
‘কীর্তনখোলা বাঁধের সাত কিলোমিটার অংশ ধনু নদের তীরে হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। আমরা বাঁধটি টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’