বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দর সচলে সোভিয়েত অভিযানের ৫০ বছর

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:৪৮

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সহায়তা সামগ্রী আনা ও আমদানি-রপ্তানি চালু করতে একমাত্র উপায় ছিল চট্টগ্রাম বন্দর চালু করা। কিন্তু বন্দরটি তখন ছিল মাইন আর ডুবে যাওয়া জাহাজের ভাগাড়। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে চট্টগ্রাম বন্দর সচল করতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামকে সচল করা। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এ বন্দর তখন ছিল ভাসমান মাইন আর ডুবে যাওয়া জাহাজের ভাগাড়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্যই দরকার জরুরি ত্রাণ। আকাশ ও বিধ্বস্ত সড়কপথে তা মেটানো সম্ভব ছিল না। রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কও তখন সম্পূর্ণ অচল। তখন বিপুল সহায়তা সামগ্রী দেশে আসা ও বন্ধ হওয়া আমদানি-রপ্তানি চালু করতে একমাত্র উপায় ছিল চট্টগ্রাম বন্দর চালু করা।

এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসে বন্ধু দেশ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাদের এই অভিযান শুরু হয় ১৯৭২ সালের এপ্রিলে। এর সফল সমাপ্তিতে চালু হয় বন্দর কার্যক্রম। এই অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারান সোভিয়েত মেরিন সেনা। এটা ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রুশ সেনাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ।

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সেই অভিযানের ৫০ বছর পালন করছে ঢাকার রুশ দূতাবাস। দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে সেই অভিযানের কিছু ছবি ও লেখা প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

অভিযানকালে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন সোভিয়েত কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, ইউএসএসআর নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন সুইপিং অপারেশন এবং ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর জঞ্জাল পরিষ্কার করার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং নতুন দেশটি মানবিক সাহায্য ও খাদ্য গ্রহণে চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের মার্চের প্রথম দিকে ইউএসএসআর-এ তার যুগান্তকারী সফরের সময় ইউএসএসআর কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল লিওনিড ব্রেজনেভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্শাল আন্দ্রে গ্রেচকোর সঙ্গে বৈঠক করেন। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বন্দর কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে তিনি সোভিয়েত নেতৃত্বকে একটি অভিযান পরিচালনার অনুরোধ করেন। ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ একটি সোভিয়েত প্রতিনিধি দল চুক্তি সম্পাদনের জন্য ঢাকায় আসে।

চুক্তির অধীনে, সোভিয়েত পক্ষ সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে রিয়ার অ্যাডমিরাল সের্গেই জুয়েনকোর নেতৃত্বে বিশেষ টাস্ক অভিযান ‘মাউন্ট’ পরিচলনা করে। এতে এক হাজার নাবিক অংশ নেন। এই অভিযানে তারা বিভিন্ন সরঞ্জাম সংবলিত ২৪টি জাহাজ ব্যবহার করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ভাসমান ওয়ার্কশপ, মাইন সুইপার, একটি পালানোর নৌকা, সমুদ্রগামী টাগ, একটি ট্যাঙ্কার, একটি এএইচটিএস জাহাজ, একটি ক্রেন বার্জ, একটি হাইড্রোগ্রাফিক সাউন্ডিং জাহাজ, ক্রু, স্টর্ম বোট, মোবাইল ডাইভিং স্টেশন এবং একটি ভাসমান গুদাম৷

জটিল অভিযান হওয়া সত্ত্বেও কাজটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে ১৯৭২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত অভিযানে ক্রুরা প্রায় এক লাখ টন স্থানচ্যুতিসহ ২৬টি ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার করে। এতে কেবল নতুন জাহাজ নয়, ১৯ শতকে ডুবে যাওয়া জাহাজও ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর জঞ্জালমুক্ত করতে অভিযানে অংশ নেয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও ক্রুরা। ছবি: সংগৃহীত

দুর্ভাগ্যবশত, সব ক্রু মিশনের পর বাড়ি ফিরে আসেনি। ১৯৭৩ সালের ১৩ জুলাই ভাসমান কর্মশালার সিনিয়র নাবিক ইউরি রেডকিন দায়িত্ব পালনকালে প্রাণ হারান। তাকে পতেঙ্গা কেপে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির ভূখণ্ডে সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়, যেখানে কর্ণফুলী নদী বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। তার সমাধিস্থল ‘রেডকিন পয়েন্ট’ নামে পরিচিত এবং দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত। প্রতি বছর তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। একাডেমির শীর্ষস্থানীয় কর্তা এবং ক্যাডেটরা ওই সমাধিস্থলের যত্ন নেন।

চট্টগ্রামের লালদীঘি পার্কেও সোভিয়েত নৌবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য নিবেদিত একটি স্টিল স্ট্রাকচার রয়েছে। এটা স্বনির্ভরতা ও সমৃদ্ধির যাত্রার শুরুতে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণের প্রতি রাশিয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

আমরা আমাদের সাধারণ ইতিহাসের সোনালী স্মৃতি লালন করি এবং বাংলাদেশিদের অনুরূপ অনুভূতির প্রশংসা করি। মস্কো আজ গর্বের সঙ্গে ঢাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবিশ্বাস্য উল্লম্ফন পর্যবেক্ষণ করে। আমরা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এই বিশ্বকে আমাদের জাতির বসবাসের জন্য একটি ভাল জায়গা করে তোলার আকাঙ্ক্ষায় এক হয়ে দাঁড়িয়েছি।

এ বিভাগের আরো খবর