যৌতুকের জন্য নির্যাতনে স্ত্রীকে হত্যার ছয় মাস পর র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন মোহাম্মদ সুমন নামের যুবক।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার চন্দননগর এলাকা থেকে শনিবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, সুমনের বাড়ি ভুজপুর থানার বাদুরখিল এলাকায়। তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মনি আক্তারকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান। পরে ইট দিয়ে মাথা থ্যাঁতলে দেন। ২৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মনি মারা যান। এ ঘটনায় গত বছর ২৭ নভেম্বর ভুজপুর থানায় হত্যা মামলা করেন মনির ভাই আব্বাস আলী।
র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, আসামি সুমন প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করেছিলেন মনি আক্তারকে। আগেও তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম বিয়ে করেন ৮ বছর আগে। সে স্ত্রীকেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন সুমন। এরপর বছর দুয়েক আগে করেন দ্বিতীয় বিয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীকেও যৌতুকের দাবিতে মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেড় বছর আগে মনিকে বিয়ে করেন সুমন। মনির বাবা চা বাগানের কর্মচারী। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চাপ দিলে মনি একটি মোটরসাইকেল ও নগদ ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সুমন তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বাবার বাড়ি থেকে আর টাকা আনা সম্ভব নয় জানিয়ে মনি চা বাগানে শ্রমিকের কাজ নেন।
গত বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য মনিকে পাঠানো হয় বাবার কর্মস্থল ভুজপুর থানার দাঁতমারা চা বাগানে। টাকা না পেয়ে সুমন ৩১ অক্টোবর সেখানে হাজির হন। এরপর স্ত্রীকে নিজ বাড়ি একই থানার বাদুরখিলে নিয়ে যেতে মোটরসাইকেলে রওনা হন।
র্যাব জানায়, টিপু নামের একজন মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন, পেছনে স্ত্রীকে নিয়ে বসেছিলেন সুমন। পথে মনিকে গালাগাল শুরু করেন সুমন। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর মনিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন। আহত মনিকে হত্যার জন্য নির্মম নির্যাতন করা হয়। তার হাত-পা ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি ইট দিয়ে মাথা থ্যাঁতলে দেয়া হয়। এমনকি মোটরসাইকেলের গরম পাইপ চেপে ধরা হয় মনির বুকে।
সড়ক দুর্ঘটনা দাবি করে মনিকে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দেন। সুমন তখন মনিকে চমেক হাসপাতালে মনিকে রেখে পালিয়ে যান।
র্যাব কর্মকর্তা নুরুল আবছার বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সুমনের অবস্থান জানা যায়। শনিবার ভোরে বায়েজিদ বোস্তামি থানার চন্দননগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।’