প্রায় ১ বছর পর মেয়েদের মুখ দেখলেন ইদ্রিস আলী। সন্তানদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনাজপুরের এই কৃষক। দিনাজপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের অলিগলিতে রিকশাচালক বেশে বহুদিন ধরেই দুই কন্যার সন্ধান করছিলেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে দুই কন্যাসহ ইদ্রিস আলীকে হাজির করে পুলিশ।
এর আগে বিকেলে ফতুল্লার মুসলিম নগর এলাকা থেকে ইদ্রিসের ৯ বছর বয়সী কন্যা ইতি আক্তার ও ৫ বছরের মীমকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। তারা সেখানে তাদের নানির কাছে ছিল।
থানা মিলনায়তনে ইদ্রিস যখন দুই কন্যাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন তার ছোট মেয়ে তখন বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বাবাকে চিনতেই পারছিল না সে। তবে বাবাকে কাছে পেয়ে ছলছল চোখে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিল ইতি।
এদিকে কন্যাদের খোঁজ পেলেও এখনই ইদ্রিস তাদের কাছে পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, তার কন্যাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, ইদ্রিসের দুই মেয়ে তাদের নানির কাছে ছিল। তাদের মা শাহনাজ বেগম এক বছর আগে দুই মেয়েসহ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে সৌদি আরব চলে যান। বিদেশ যাওয়ার আগে ইদ্রিস ও শাহনাজের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
শিশু দুটিকে তাদের নানির কাছে রেখে যান শাহনাজ। নানি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
আর দিনাজপুর থেকে ইদ্রিস নারায়ণগঞ্জে এসে বিভিন্ন অলিগলিতে রিকশা চালিয়ে কন্যাদের খোঁজ করছিলেন। তিনি ফতুল্লা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা নিউজবাংলাসহ বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার কথা জানতে পারি। পরে তাদের খোঁজ করতে নানামুখী চেষ্টা শুরু হয়।’
তিনি আরও জানান, একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ওই শিশুদের নানির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। পরে নানা কৌশলে তার ঠিকানা সংগ্রহ করে পুলিশ। শনিবার বিকেলে দুই নাতিসহ তাকে থানায় আনা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা মেয়ে দুটিকে আদালতে পাঠাব। আদালত তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।’
দুই মেয়েকে ফিরে পেয়ে ইদ্রিস বলেন, ‘মেয়েগো কাছে পেয়ে অনেক শান্তি লাগতাছে। যারা আমারে সহযোগিতা করেছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আমার মেয়েগো দেখছি এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার আর কিছু নাই।’
মেয়ে দুটির নানি আকলিমা জানান, এক বছর আগে বিদেশ যাওয়া নিয়ে জামাতা ইদ্রিসের সঙ্গে তার মেয়ে শাহনাজের দ্বন্দ্ব হয়। পরে শাহনাজ দিনাজপুর থেকে গাজীপুর গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। পরে সেখান থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জে মায়ের কাছে চলে আসেন। সেখানেও কিছুদিন গার্মেন্টসে কাজ করেন। ২ মাস আগে শাহনাজ সৌদি আরবে চলে যান।
আকলিমা বলেন, ‘যাওনের সময় ইতি আর মীমরে আমার কাছে দিয়ে গেছে। আমি ওগো স্কুলে ভর্তি কইরা দিছি। ওরা বড় হইলে যদি বাপের কাছে যাইতে চায় আমরা দিয়া দিবাম।’