গরমের দাপট বাড়ছে দেশজুড়ে। একইসঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। অঞ্চল ভেদে গরমের তীব্রতায় তারতম্য থাকলেও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় কিছুটা নিম্নমুখী হলেও জেলায় জেলায় পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হচ্ছে।
দেশের যেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাওয়া হচ্ছে সেসব স্থানে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত প্রায় এক সপ্তাহ থেকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা নিম্নমুখী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডায়রিয়া ও কলেরা চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসডিডিআরবি, বি) হাসপাতালে সপ্তাহখানেক আগেও রোগীর যে ভিড় ছিল তা কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে দৈনিক ভর্তি রোগী হাজারের নিচে নেমেছে। তবে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
আইসিডিডিআর,বি-এর তথ্য বলছে, মার্চে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতা ৩০ হাজার ৩৭২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আর শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত পেটের পীড়া নিয়ে এখানে চিকিৎসার জন্য এসেছে ১৮ হাজার ৯৮৭ জন।
গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিশেষায়িত হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১২শ’। এরপর থেকেই রোগীর সংখ্যা কমছে। শুক্রবার এখানে রোগী আসার সংখ্যা কমে হাজারের নিচে নামে। শনিবার রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে ৫৮২ জন রোগী আসেন এই হাসপাতালে।
আইসিডিডিআর, বি’র সহকারী বিজ্ঞানী শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে রোগীর উপচেপড়া ভিড় ছিল। প্রায় এক মাস পর শুক্রবার রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে। শনিবারও সংখ্যাটি হাজারের নিচেই থাকবে আশা করা হচ্ছে।’
‘এদিকে মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৩০ শতাংশ রোগী শিশু হলেও বর্তমানে কম বয়সীদের আক্রান্তের হার আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। গত দুদিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী বর্তমানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৪০ শতাংশই শিশু। আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগই আসছে পানিশূন্যতা নিয়ে, এটা ঝুঁকির কারণ।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অধিকাংশই যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, দক্ষিণ খান, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে দুই ডোজের কলেরা টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এখানে চার হাজার ২০২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। বর্তমানে নগরীতে দৈনিক গড়ে দেড়শ’ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
তীব্র গরমের পাশাপাশি খাবারের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এজন্য বাইরের খোলার খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও পানি ভালো করে ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর এক থেকে চার কোটি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৭টি দেশে কলেরার প্রকোপ দেখা যায়। আর বাংলাদেশে প্রতি বছর কলেরার শিকার হয় লাখের বেশি মানুষ।
শীত, বর্ষা ও গরমের সময়ে কলেরার প্রকোপ বাড়ে। সে অনুযায়ী এপ্রিলের শুরুতে দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই গরম দেখা দেয়ায় এবং রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় নিরাপদ পানির অভাবে মার্চেই ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। গত বছর মার্চে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ছিল দৈনিক ৬ শ’র মতো। এবার তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল বলছে, এ বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৪ জন।