সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখ উপলক্ষে বারুহাস গ্রামে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা।
কথিত আছে, প্রায় দেড় শ বছর আগে জমিদার আমলে গড়ে ওঠা চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা।
গত দুই বছরে করোনার কারণে মেলা বন্ধ থাকায় এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে বসেছে মেলা। এরই মধ্যে মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বারুহাস ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ময়নুল হকের বিরুদ্ধে।
সরেজমিন মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান ময়নুল হকের সই করা টোকেন ব্যবহার করে তার লোকজন খাজনা আদায় করছেন। তাদের হাতে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাও হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই চলছে এ খাজনা আদায়।
ক্রেতাদের অভিযোগ, মেলাটি সরকারিভাবে আয়োজন করা হলেও বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার নিজস্ব লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ক্রেতাদের কাছ থেকে টোকেনের মাধ্যমে খাজনার নামে জোর করে চাঁদা আদায় করছেন।
এ কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অনেক দোকানদার অতিরিক্ত খাজনার ভয়ে বারুহাস গ্রামের আশপাশে যেমন- বিনোদপুর বাজার, সাচানদীঘি গ্রাম, কোহিত মোড়ে, হেদারখাল, মনোহরপুর, দিঘরিড়া বাজারসহ তাড়াশ-সিংড়া রাস্তার পাশে বসেছেন।
শাহজাদপুর থেকে আসা ঝুড়ি ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, ‘আমার ছোট দোকান থেকে জোর করে ১ হাজার ২০০ টাকা চেয়ারম্যানের লোকজন খাজনা আদায় করেছেন।’
তালম গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সরকারি রসিদ নাই, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত টোকেন দিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা খাজনা নিয়েছে। এতে বাধা দিলে আমাকে প্রাণের ভয় দেখায় এবং আমার দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট করার হুমকি দেয়।’
চেয়ারম্যানের খাজনা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বারুহাস ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে খাজনা আদায় করছেন।’
তাড়াশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘খাস কালেশন সরকারি আয়। এটি ভূমি অফিসের লোকজন দিয়ে আদায় করা হয়। এতে চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কোনো এখতিয়ার নেই।’
এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমতি না নিয়েই মেলা বসানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে খাজনা আদায় বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের নির্দেশনার পরও বন্ধ হয়নি কথিত খাজনা আদায়।
চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আমার লোকজন দিয়ে মেলার খাজনা আদায় করব। তবে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না।’
এখতিয়ার না থাকার পরও কেন খাজনা তোলা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এ মেলা থেকে এভাবে খাজনা তোলা হয়। এর আগের চেয়ারম্যানরাও এভাবে খাজনা তুলেছেন। মূলত ইউনিয়ন পরিষদের কিছু খরচ থাকে, সেগুলো মেটাতেই মেলা থেকে খাজনা তোলা হচ্ছে।’