ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে এখন প্রতি সপ্তাহে বাঁশের হাট বসে। সেখানে হাট বসাতে এক বছরের চুক্তিতে স্টেডিয়ামটি ইজারা দিয়েছেন পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান।
এক বছরের চুক্তিতে হাটটি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় ইজারাদার শামিম ইসলাম। এরপর সেখানে তিনি হাট বসান।
স্টেডিয়ামে হাট বসানো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় খেলোয়াড় ও বাসিন্দাদের। বাঁশের ছোট ছোট টুকরার কারণে মাঠে আর খেলতেও পারেন না তারা।
স্টেডিয়াম ইজারার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাণীশংকৈল পৌরসভার প্রধান সমন্বয়কারী ডালিম শেখ।
নিউজবাংলাকে অভিযোগ করে স্থানীয় খেলোয়াড়রা বলেন, পৌরসভার ওয়ার্ড-৮ হ্যালিপ্যাড সংলগ্ন স্টেডিয়ামে হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত চলে বাস কেনাবেচা। সপ্তাহে একদিন হাট বসলেও বাঁশের টুকরার কারণে সারা সপ্তাহই খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হয়।
স্থানীয় ক্রিকেটার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হাট বসানোর জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। কিন্তু খেলার জন্য মাঠ একটাই, স্টেডিয়ামের ভেতর কেন হাট বসবে। সরকারপ্রধান যুব সমাজকে মাঠে আহ্বান করছেন, কিন্তু হাট সংশ্লিষ্টরা যুব সমাজকে মাঠ থেকে বের করে দিয়ে মাদকাসক্ত হতে প্রভাবিত করছে। আমাদের মাঠ ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
ভলিবল খেলোয়াড় সোহান ইসলাম বলেন, ‘আমাদের খেলার জন্য একমাত্র মাঠ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, কিন্তু মাঠটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। অনেকেই খেলতে নেমে বাঁশের টুকরোয় রক্তাক্ত হয়েছে। তাই এখানে বাহিরের কোনো খেলোয়াড় আর খেলতে চায় না। খেলার আসরও আর জমে না। আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’
হাট বসার আগে মাঠে রোজ ফুটবল অনুশীলন করতেন প্রতিভাবান ফুটবলার মিনার রহমান। বলেন, ‘আমিসহ অনেকেই অনুশীলনে আসতাম। এখন আসা হয় না। এভাবে বাঁশের হাট বসিয়ে খেলাধুলাকে বাধাগ্রস্ত করা অযৌক্তিক। পৌর কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভাবা উচিত।’
স্থানীয় হামিদুর রহমান বলেন, ‘আগে বিকে হলে ছেলেরা খেলত, আমরা উপভোগ করতাম। এখন কেউ খেলে না। কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন হয় না। খেলার মাঠে হাট বসলে খেলাতো বাধাগ্রস্ত হবেই।’
রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমিলা নারী ফুটবল দলের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে খেলাধুলার জন্য অনেক বড় সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সরকার প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের এ উদ্যোগকে ব্যাহত করা হচ্ছে। স্টেডিয়ামে বাশেঁর হাট বসানো সম্পূর্ণভাবে নীতি নৈতিকতা বিরোধী।’
রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘স্টেডিয়াম হওয়ার আগে থেকে সেটি বাঁশের হাট ছিল।’
স্টেডিয়াম হওয়ার পরে বাঁশের হাট হিসেবে পৌরসভা কেন ইজারা দিল এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
খেলোয়াড়দের অভিযোগ স্টেডিয়ামে বাঁশের টুকরো খেলাধুলায় অসুবিধা করে, মেয়র হিসেবে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পরে মন্তব্য করব।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিনি স্টেডিয়ামটি সবুজ ঘাসের সমারোহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে পরিচর্যার জন্য মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। আর হাটের বিষয়ে আমি ইজারাদারদের সাথে কথা বলে সেটিকে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করব।’