সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে রাজধানীর বড় ও পাইকারি বাজারে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম প্রতি এককে কমেছে পাঁচ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত। তবে ছোট বাজারগুলোতে দাম কমার প্রভাব নেই।
রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। অথচ পাড়া-মহল্লার ছোট বাজারগুলোতে অনেকটা আগের দামেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও অনেকটা বাধ্য হয়ে কাছাকাছি বাজার থেকে বাড়তি মূল্যে সবজি কিনছেন।
পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই প্রচুর সবজি ঢাকায় আসছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে পরিবহন, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে সবজির প্রতি এককে দাম পড়ছে বেশি। তাই কিছুটা বেশি দামেই তাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর সহজলভ্যতা, সময় ও যানজটের ঝামেলা এড়াতে দাম বেশি হলেও স্থানীয় বাজার থেকেই সবজি কিনছেন ভোক্তারা।
শনিবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে মানভেদে পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে তা এখনো ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে গত সপ্তাহে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে এই বাজারের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কমলাপুর ও মতিঝিল রেলওয়ে কলোনির বাজারে।
গরমে বিশেষত রমজান মাসে শসার চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে। এক সপ্তাহ আগে শশার কেজি ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতি কেজি শসা কারওয়ান বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য বাজারে রকমভেদে আগের দামই রয়ে গেছে।
করলা কারওয়ান বাজারে ৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। আগের সপ্তাহে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে এই সবজি। দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
এদিকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম রমজানের শুরুতে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় উঠে যায়। দাম কমে তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট বাজারে এখনও রকমভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই সবজি।
দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে বেশ কিছু সবজির। তবে কারওয়ান বাজারের তুলনায় অন্যান্য বাজারে এগুলো কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে চিচিঙ্গা কারওয়ান বাজারে ৫০ টাকার বিপরীতে অন্য বাজারে ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকার বিপরীতে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকার বিপরীতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকার বিপরীতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকার বিপরীতে মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকার বিপরীতে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কারওয়ান বাজারে আকারভেদে প্রতি হালি লেবু ১০ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য খুচরা বাজারে ২০ টাকা হালির নিচে কোনো লেবু পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সব বাজারেই প্রায় সমান দামে প্রতি কেজি রসুন ও আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে আলু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারিতে প্রতি পাল্লা অর্থাৎ পাঁচ কেজির দাম পড়ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কেজিতে দাম পড়ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
ছোট ও বড় বাজারে অভিন্ন দামে সজনে ডাটা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা এবং কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ধনে পাতা, বিভিন্ন শাক ও ডাল জাতীয় পণ্যের।
২০ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন মো. হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে সবজির যে দাম ছিল, তার চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমছে। তবে বেচাকেনা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেতা কম থাকার পাশাপাশি কাঁচামালের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া জেলা থেকে প্রচুর সবজি আসছে প্রতিদিন। এছাড়া সাভার ও নরসিংদী থেকে সবজি বাজারে আমদানি হচ্ছে। যার কারণে দাম কম। আমদানি কম হলে দাম কিছুটা বাড়ে।’
অন্যদিকে পাইকারি বাজার থেকে কাঁচামাল কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে বাড়তি ব্যয় হয় খুচরা বিক্রেতাদের। যার কারণে বিভিন্ন সবজি একক প্রতি কয়েক টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে নিউজবাংলাকে জানান কমলাপুরের সবজি বিক্রেতা মো. রিফাত।
তিনি বলেন, ‘মাল কেনার পর ভ্যানভাড়া ২৫০ টাকা, লেবারকে দিতে হয় ২২০ টাকা, পলিথিন কেনায় ৫০ টাকা, ফুটে (মাল রাখার স্থান) দিতে হয় ৫০ টাকা, দোকান ভাড়া লাগে ৩০০ টাকা। এছাড়া আমার নিজের খরচ বাদ দিলেও একজন হেল্পারকে দেই ২০০ টাকা। আসার পথে দুই-এক জায়গায় ২০ থেকে ৩০ টাকা চলে যায়। এসব খরচ যখন দামের সঙ্গে যোগ হয় তখন কেজি প্রতি কয়েক টাকা এমনিতেই বেড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে না। মালের দাম বেশি পড়লেও কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই খরচের টাকাটা উঠছে কোনোরকমে। আরও কিছুদিন পরে বেচাকেনা ভালো হবে এবং লোকসান পুষিয়ে যাবে- এই আশায় কাঁচামাল বিক্রিটা ধরে রেখেছি। ’
পাইকারি বাজারের চেয়ে সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মতিঝিল রেলওয়ে কলোনির বিক্রেতা মো. রাজন বলেন, ‘সবজির কেনার পর পরিবহন ও অন্যান্য খরচ থাকে। এছাড়া মালের কোয়ালিটি ভালো হলে দামও একটু বেশি হয়। আবার আমদানির তুলনায় অনেক সময় চাহিদা বেশি থাকে। তখন দাম একটু বেশি পড়ে।’
বেশি দামে কেন ছোট বাজার থেকে সবজি কেনেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সুলতান সুলাইমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে সবজির তাম প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি। তারপরও বাজার বাসার পাশে হওয়ায় এখান থেকেই সবজি কিনি।’
একই কথা জানালেন আরেক ক্রেতা মৌরি। তিনি বলেন, ‘বাসার পাশে হওয়ায় এখন থেকে বাজার করি। পাইকারি বাজারে যাওয়া-আসার ঝামেলার চেয়ে কিছুটা বেশি টাকা খরচ হলেও মহল্লার বাজারই আমাদের জন্য ভালো।’