বৈশাখের শুরুতেই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে। বৃষ্টি ঝরছে সীমান্তের ওপারের মেঘালয়েও। এতে সুরমার পানি এখন বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
পানি বাড়তে থাকলে সুনামগঞ্জের বেশির ভাগ হাওরের ফসলই তলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ঢলের আশঙ্কায় হাওরের ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেলেই কেটে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
তাহিরপুরের শনির হাওরের কৃষক নুর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধান যা পাকছে তা কেটে নিয়েছি। তবে এখনও বেশির ভাগ ধান মাঠে রইছে। এর মধ্যে মেঘ তুফানের লাগি বজ্রপাতের ভয়ে ঘর থাকি বারোনি যায় না। আমরার যে দিন কিলান যাইব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।’
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের ফসলরক্ষার অস্থায়ী বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। ১৫ দিন ধরে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকমে টিকে আছে বাঁধগুলো। ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশির ভাগ বাঁধই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা এলাকার কৃষক নীলমনি দাস বলেন, ‘এলাকার সবাই রাত-দিন পরিশ্রম করে হাওরের বাঁধ কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু পানি আরও বাড়লে টিকিয়ে রাখা যাবে না। হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে।’
বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরের কৃষক আজিম মিয়া বলেন, ‘তারা যদি বাঁধটা ঠিক করিয়া দিত, তাইলে আমরার হাওরও ইলান পানি আইত না। তারা যারে মন চাইছে তারে দিয়া বাঁধ বানাইছে। এখন ধান পাইমু, না কি সব পানির তলে নষ্ট অইবো জানি না।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আবহাওয়া ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র শনিবার জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ভারতের মেঘালয়, আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এতে সুরমাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বৃষ্টি ও ঢলে সুরমাসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাওরের সবগুলো বেড়িবাঁধই এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে জেলার অধিকাংশ হাওরের ফসলই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় আবাদ করা ২ লাখ ২২ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ধান এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে।
‘এখনও দুই লাখ হেক্টরের চেয়ে বেশি জমির ধান কাটা বাকি। তাই দ্রুত ধান কেটে নিতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। আমাদের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর ও রিপার মিলিয়ে প্রায় ৩৯২টি যন্ত্র হাওরে ধান কাটছে।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে পানি দ্রুত বাড়ছে। ১৫ দিন ধরে মাটির অস্থায়ী বাঁধগুলো যুদ্ধ করে টিকে আছে। পানি বাড়ায় তা ভেঙে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সব বাঁধেই প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কাজ করছে।
‘ধান পাকতে শুরু করেছে, তাই দ্রুত ধান কেটে নিতে হবে। আমরা বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’