করোনার কারণে টানা দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়নি এই পূজা। এবার বিধি-নিষেধ না থাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজারও ভক্তের সমাগমে ঢাকার ধামরাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে চরক পূজা।
শুক্রবার মনের ইচ্ছা পূরণে চরক গাছের গোড়ায় পূজো দিয়েছেন ভক্তরা। আর পূজার মূল আকর্ষণ পিঠে বরশি গেঁথে চরক গাছে বেঁধে শূন্যে ভেসেছন সাধক নিতাই চন্দ্র সরকার। পূর্বপুরষদের রেখে যাওয়া ধর্মীয় আচার মেনে চার দশক ধরে পিঠে বরশি গেঁথে এ ধরনের আচারে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল থেকে পূজা ঘিরে শত শত ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন ধামরাই উপজেলার যাত্রাবাড়ি মাঠে। পূজো দেয়া ছাড়াও পূজার মূল আকর্ষণ চরক গাছে পিঠে বরশি গেঁথে ঘুরানোর অপেক্ষায় ছিলেন সবাই।
এদিকে পূজার মাঠ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আইনগন এলাকায় সাধক নিতাই চন্দ্র সরকারের পিঠে চলছিল বরশি গাঁথার আনুষ্ঠানিকতা। ঢোল আর বাদ্যের তালে বাড়ির আঙ্গিনায় নিতাইয়ের পিঠে বরশি গাঁথেন পূজারী। সে সময় নানা ধর্মীয় আচার পালনের সঙ্গে উলু উলু ধ্বনিতে ভরে ওঠে চারপাশ। সিঙ্গায় ফুঁ দিতে থাকেন নিতাই।
চরকে ঘুরার আগে বাড়িতে পূজা অর্চনাসব আচার শেষে নিতাই ও তার পরিবারের সদস্যরা পায়ে হেঁটে রওনা হন পূজার মাঠের দিকে। পরে বিকেল ৫টার দিকে অপেক্ষা শেষ হয় ভক্তদের। নিতাইকে ঝোলানো হয় প্রায় ৩০-৩৫ ফুট উঁচু চরক গাছে। এরপর ভক্তদের উলু ধ্বনি ও ঢোলের তালে চরক গাছে শূন্যে ঘুরতে থাকেন তিনি। নিতাইকে ঘুরাতে অপর প্রান্তে রশি ধরে ঘুরাতে থাকেন কয়েকজন ভক্ত।
চক্করের মাঝে মাঝে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, নিতাইকে থামানো হয় কয়েকবার। এ সময় কল্যাণের আশায় ভক্তদের অনেকেই নিতাইয়ের কোলে তুলে দেন তাদের শিশু সন্তানকে। কয়েক শিশুকে কোলে নিয়েও শূন্যে ভেসেছেন নিতাই। এভাবেই শেষ হয় চরক পূজা।
পূজায় আসা স্থানীয় সুমা পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল চরক পূজা। অনেকদিন পর আবারও পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। ঠাকুরের কৃপায় করোনা চলে গেছে। তাই পূজায় আসতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। এখানে সবাই মনের বাসনা নিয়ে আসেন। পরে পূজো দিয়ে উৎসব করেন।’
আশিস কুমার পাল নামে আরেকজন বলেন, ‘আজ চরক পূজায় আমাদের ধর্মাবলম্বীদের অনেক ভিড় হয়েছে। অনেক দিন পর এভাবে সবাই চরক পূজায় অংশ নিয়েছেন। খুব ভালো লাগছে চরক পূজায় আসতে পেরে। শুধু হিন্দুরাই না, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বরাবরের মতো চরক পূজা দেখতে এসেছেন। সবাই মিলে উৎসব উদযাপন করেছি আমরা।’
চরক গাছে ঝুলানোর আগ মুহূর্তেএদিকে চরকে ঘোরা শেষে নানা ধর্মীয় আচারে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিতাই চন্দ্র সরকার। কথা বলার ফুরসতও যেন নেই তার। কথা হয় তার ভাই প্রাণ গোপাল সরকারের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে গোপাল বলেন, ‘পূর্বপুরুষের আমল থেকে আমরা চরক পূজায় অংশ নিচ্ছি। আমার ভাই ১২ বছর বয়স থেকে পিঠে বরশি গেঁথে চরক গাছে শূন্যে ভাসেন। এবারও চরকে উঠেছেন। এজন্য বিগত এক মাস ধরে তিনি নিরামিষ খাচ্ছেন।
প্রাণ গোপাল জানান, পূজাস্থলে আসার আগে বাড়ির মন্দিরে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর গত কয়েকদিন ধরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন নিতাই। পূজা শেষ করতে পারায় পরিবারের সদস্যরা এবার বেশ খুশি।