হবিগঞ্জ শহরে শতবছরের চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাট করে বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই পুকুর ভরাটের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ছে পরিবেশকর্মী ও সাধারণ মানুষের।
হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পৌরসভার আয় না বাড়ালে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়েছে। তাই পৌরসভার আয় বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকায় জমিদার গোষ্টবাবুর দালান (বর্তমানে সমবায় ব্যাংক)। তার পূর্বপুরুষের নামে চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই চন্দ্রনাথ পুকুর। দোকানঘর সরিয়ে পুকুর ভরাট শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা টুকরি দিয়ে বালু ফেলছেন পুকুরে।
শ্রমিকরা জানান, চার দিন ধরে পুকুর ভরাটে মাটি ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, চন্দ্রনাথ পুকুরের আয়তন এক একর। পুকুরপাড়ের ১৯ দোকান মালিককে নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। তিনি পুকুরটি ভরাট করে বহুতল মার্কেট করার সিদ্ধান্ত জানান। এরপর শুরু হয় পুকুর ভরাটের কাজ।
শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে চন্দ্রনাথ পুকুর এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ একসময় পুকুরের শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট করায় শহরে জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শতবছরের চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাটে হবিগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগ নিন্দনীয়। একই সঙ্গে বেআইনিও। দেশের সব পৌর এলাকার পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাধার পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে আইন ও নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রকল্প নিতে হবে। আমরা অবিলম্বে ভরাটকাজ বন্ধ করে পুকুরটি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবি জানাই।’
মেয়র আতাউর রহমান সেলিম দেশের বাইরে আছেন। পৌর সচিব মো. ফয়েজ আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুকুরে মাটি ভরাটের সত্যতা স্বীকার করেন।
পৌর সচিব বলেন, ‘পুকুরে মাটি ভরাটের দায়িত্ব কাউন্সিলর শাহ সালাউদ্দিন আহম্মদ টিটুকে দেয়া হয়েছে। তিনি সব তথ্য দিতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও কমিশনার সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র গৌতম কুমার রায় বলেন, ‘দুই-তিন মাস আগে মেয়রের সভাপতিত্বে পৌর পরিষদের এক সভায় চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাট করে বহুতল মার্কেট করার সিদ্ধান্ত হয়। সরকার বলছে, পৌরসভার আয় না বাড়ালে আর্থিক সহযোগিতা করবে না। তাই পৌরসভার আয় বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’