ভোলার মনপুরায় প্রতিনিয়ত চুরি হয়ে যাচ্ছে কৃষকের গরু-মহিষ। গত কয়েক দিনে এ এলাকার ২৯ কৃষকের অন্তত ৭০টি গরু-মহিষ চুরি হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালীদের মদদে একটি চক্র এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। তাই চুরির ঘটনায় মামলা করতেও ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা।
একের পর এক চুরির ঘটনায় দিশাহারা কৃষকরা দাবি করেছেন, চুরি হওয়া তাদের গরু-মহিষগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার কম নয়।
সম্প্রতি নুরনবী নামের এক কৃষকের পাঁচটি গরু চুরি হয়ে গেলে থানায় মৌখিক অভিযোগ জানান তিনি। এর আগে গত মঙ্গলবার চরনজরুল থেকে তাজল নামের আরেক কৃষকের তিনটি মহিষ চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি। পরে ওই কৃষক দিশাহারা হয়ে থানায় জিডি করতে গেলে মামলার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পরে চক্রের ভয়ে তিনিও মামলা করেননি।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের মদদে একটি চক্র রাতের বেলায় মূল ভূখণ্ড ও বিভিন্ন চরাঞ্চলে থাকা গরু-মহিষ চুরি করে ট্রলারে করে হাতিয়ার ৪ নম্বর ঘাট হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে। কিন্তু হেনস্তার ভয়ে ওই সংঘবদ্ধ চক্রটির নাম মুখে আনতে চান না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
এমনকি গরু-মহিষ চুরি হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে মামলা না করতে একের পর এক হুমকি দেয়া হয় বলেও জানা গেছে। তবে কৃষকরা আশা করছেন, মামলা না করলেও সংঘবদ্ধ ওই চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
কৃষকরা জানান, মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরনজরুল, সোনারচর ও বদনারচরে মনপুরার কৃষকরা রাখালের সাহায্যে গরু-মহিষ পালেন। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে চরনজরুলের কৃষক মতিনের একটি মহিষ, দীপকের তিনটি মহিষ ও তিনটি গরু, তাজলের তিনটি মহিষ ও স্বপনের পাঁচটি মহিষ চুরি হয়।
সোনারচর থেকে কৃষক জয়দেবের তিনটি গরু, শিমুল দাসের একটি গরু, পরিমলের একটি গরু, মিজানের দুটি গরু, জাকির, সেকান্দার ও বেচুর একটি করে তিনটি গরু, শুভাষের একটি গরুসহ ওই চর থেকে এক রাতে ১১টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্রটি।
এ ছাড়া বদনারচর থেকে ফারুক মেম্বারের তিনটি মহিষ, শামসুদ্দিনের দুটি গরু, কিরণের তিনটি, ছালাহউদ্দিনের পাঁচটি, জিয়া উদ্দিনের একটি, কামালের দুটি, মহিউদ্দিনের দুটি, মাইনুদ্দিন ব্যাপারীর দুটি, লতিফের তিনটি, রহিমের একটি ও রবিউলের একটিসহ মোট ২৭টি গরু চুরি হয়েছে।
এ বিষয়ে মনপুরা থানার ওসি সাইদ আহমেদ বলেন, ‘গরু-মহিষ চুরি হওয়ার খবর কৃষকের কাছ থেকে পাচ্ছি। মামলা করতে বললে তারা মামলা করছেন না। তার পরও আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, ‘হঠাৎ করে গরু-মহিষ চুরি বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মৌখিক অভিযোগ দিচ্ছেন। দ্রুত সংঘবদ্ধ চক্রটি ধরতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’