বাসে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার। অন্যবার যেভাবে মানুষ টিকিটের জন্য কাউন্টারগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়েন, এবার সে দৃশ্য নেই। অনেকটা জনশূন্য অবস্থা কাউন্টারগুলোয়।
যারা টিকিট কিনতে যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিলেট টিকিট কেটেছেন।
শুক্রবার রাজধানীর গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে টিকিট বিক্রেতাদের অলস বসে থাকার দৃশ্য। একই চিত্র দেখা গেছে কল্যাণপুরের কাউন্টারগুলোতেও।
গাবতলীর বালুর মাঠ এলাকায় হানিফ পরিবহনের ঢাকা-বরিশান রুটের ম্যানেজার কোরবান আলী ভুলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কাউন্টারে প্রায় ২০ বছর চাকরি করছি, এমন দৃশ্য আমি আগে কখনও দেখিনি। আগে ঈদের টিকিট ছাড়লে মানুষ চিলের মতো নিতেন, এখন আমরা বসে আছি, কিন্তু যাত্রী নেই।’
শুধু অগ্রিম নয়, রানিং টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান তিনি। বলেন, ‘বিপদের মধ্যেই আছি। করোনার কারণে মানুষের মধ্যে ঈদের ভাব এখন আর আসে না। দক্ষিণবঙ্গের অগ্রিম টিকিট বিক্রির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, কেউ আসছেনই না। উত্তরবঙ্গের টুকিটাকি বিক্রি হচ্ছে। বিআরটিএ থেকে আমাদের চার্ট দিয়ে দিছে। তাদের নির্ধারণ করা ভাড়াই আমরা যাত্রীদের থেকে নিচ্ছি।’
কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. এরশাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যতগুলো রাস্তায় আমাদের বাস চলে সবগুলোতেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখের টিকিটের চাহিদা বেশি। এর মধ্যে ২৮ ও ৩০ তারিখের টিকিটের চাহিদা বেশি। বেলা ১টায় ৩০ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কারণ ৩০ তারিখে বাসের শিডিউল কম।’
৩০ এপ্রিল কম থাকার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৮ তারিখ থেকেই উত্তরবঙ্গের রাস্তায় জ্যাম থাকবে। ২৮ ও ২৯ তারিখে যে গাড়ি ছেড়ে যাবে, জ্যামের কারণে ফিরে আসবে কীভাবে গাড়িগুলো?’
পাশের শ্যামলী এনআর পরিবহনের কাউন্টারে দেখা যায়, অগ্রিম টিকিটের জন্য বাঁশ দিয়ে লাইন করে রাখা হলেও সেখানে কেউ টিকিট কাটার জন্য দাঁড়িয়ে নেই।
রংপুরের এক যাত্রী কালাম মিয়া কাউন্টারে আসেন তখন। বলেন, ‘অন্য সময় কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট কিনতে এলে কত না ঝামেলায় পড়তে হতো। এবার এসে তো অবাক, পুরো কাউন্টারই ফাঁকা। টিকিট চাওয়ামাত্র পেলাম।’
শ্যামলী এনআর পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক জীবন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রায় দুই দশক পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি, এমন যাত্রী হাহাকার দেখিনি ঈদে। মনে হচ্ছে দুই বছর করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। আবার এমন হতে পারে, মাসের ১৫ তারিখ হওয়ায় মানুষের কাছে টাকা নেই বা অনেকে ছুটি পায়নি। ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখের টিকিট বেশি বিক্রি করেছি। এই তিন তারিখে টিকিটের চাপ কিছুটা বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩৬ সিটের বাসে অনলাইনে ১২টি সিটের টিকিট বিক্রি হয়। বাকি এখানে বিক্রি হয়। আমাদের টিকিট এখনও অ্যাভেইলেবল। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হালকা আনাগোনা ছিল। পরে ওভাবে যাত্রীদের আনাগোনা নেই। জ্যামের আশঙ্কায় ৩০ তারিখের বাসের শিডিউল কমিয়ে রাখছি। যদি জ্যাম কম হয় সে ক্ষেত্রে বাস আরও বাড়ানো হবে।’
৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা বেশি বলে জানান শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর বড় কাউন্টারের ফোরম্যান উৎপল বিশ্বাস।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে আগামী মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত ঈদের টিকিট বিক্রি হবে। রাস্তায় যানজট বেশি হওয়ার শঙ্কায় আমরা ৩০ তারিখের টিকিট কম বিক্রি করছি। কারণ ৩০ তারিখে রাস্তায় বাস আটকে থাকলে যাত্রীরা কাউন্টারে ঝামেলা করতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
অনেক কাউন্টারে আবার টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট তারা অনলাইনে বিক্রি করছেন। এমন একটি পরিবহনের এসআর ট্রাভেলস।
এসআর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা বিপুল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে সহজ ডটকমে। কাউন্টারে শুধু রানিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে।’