রোজার মাসে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করলে ‘দাঁতভাঙা’ জবাব দেয়ার হুমকি দেয়া কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা সরোয়ার হোসাইন জীবন তার ভুল বুঝতে পারার কথা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। তিনি এ জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।
পয়লা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি, সেটিও মুছে দেয়া হয়েছে। বলেছেন, বিষয়টি যে এত বড় হয়ে যাবে, সেটি তিনি বুঝতে পারেননি।
কবি নজরুল কলেজে ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। তিনি আগের কমিটির উপসংস্কৃতি সম্পাদক ছিলেন।
পয়লা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে কয়েক বছর ধরেই ধর্মীয় ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, এই উৎসব ইসলাম অনুমোদন করে না।
তবে নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশাখের প্রেরণায় কূপমণ্ডূকতা ছাড়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সব সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার শক্তি জোগায়, স্বপ্ন দেখায়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।’
তবে শেখ হাসিনার দলের অনুসারী হয়েও তার এই চেতনা ধারণ করেন না ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ার হোসাইন জীবন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ শুনলাম আগামীকাল নাকি কলেজে বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা হবে। রমজানের তাঁবু দিতে সমস্যা, মসজিদে ইফতার দিতে সমস্যা, কলেজ প্রশাসনের। আগামীকাল যদি কলেজে কোনো ধরনের বৈশাখ উৎযাপন করা হয় এই পবিত্র মাসে, তাহলে কলেজ প্রশাসনকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে বলে দিলাম।’
কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস
গণমাধ্যমে এই স্ট্যাটাস প্রতিবেদন আকারে উঠে আসার পর সেটি মুছে দেন জীবন।
এমনটা কেন লিখলেন- জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা হচ্ছে রমজান উপলক্ষে প্রতি বছর নামাজ পড়ার জন্য কলেজের বাইরে ছাউনি দেয়া হয়। আমেনা আপা (কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ) আসার পর তা দেয়নি। পরে নিউজ-টিউজ হলে আপা ওইডা দিছে।
‘প্রতি বছর মসজিদে ইফতার দেয়া হতো। এবার এখনও দেয়া হয়নি। রমজানে আবার নাচগানেরও ব্যবস্থাও হয়েছিল ক্যাম্পাসে। রোজা রেখে নাচগান এটা কেমন দেখায়? এগুলো দেখে কিছু না ভেবেই আমি একটা স্ট্যাটাস দিছি। পরে অবশ্যই কাইটা (মুছে) দিছি। এটা যে এত বড় হবে তা আমার জানা ছিল না।’
হুমকি দিতে এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই স্ট্যাটাস দেয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এমনিতেই দিছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অনুতপ্ত। আমার ভুল হয়ে গেছে। এটা দেয়া (স্ট্যাটাস) আমার ঠিক হয়নি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
তবে জীবনের অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা বেগম। তিনি বলেন, আমার ৩৩ বছরের শিক্ষকতা জীবন। আমি কি এটুকু বুঝব না রমজান মাসে কতটুকু কী করা উচিত। আমরা সবাই-ই তো রোজা করছি।’
রমজানে কলেজে কোনো নাচগানের আয়োজন করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের জন্য রিহার্সেল হয়েছিল। এর বেশি কিছু না।’
নামাজ পড়ার জন্য কলেজের বাইরে ছাউনি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রমজানে সাধারণত আগে ক্লাস হতো না। এবার বিশেষ পরিস্থিতিতে হচ্ছে। ছাউনির বিষয়ে আমি মসজিদ কমিটিকে বলেছিলাম, যখনই তারা প্রয়োজন মনে করবে তখনই ছাউনির ব্যবস্থা করা হবে।’