বাংলা নতুন বছরকে ঘিরে এবার কেনাকাটার ধুম চোখে না পড়লেও নতুন বছরের প্রথম দিন সরকারি ছুটিতে ঈদের কেনাকাটা করতে বিপণি বিতানে মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে।
সকালের দিকে বর্ষবরণের আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করে দুপুরের পর রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়াতেই দেখা গেল, সারি বেঁধে মানুষ ঢুকছে সেখানে। ভেতরে ভিড়ের কারণে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করাই কষ্টসাধ্য। ঠিকঠাক দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না চলন্ত সিঁড়িতে।
বিক্রেতারা বলছেন, সকাল থেকেই ক্রেতারা আসতে শুরু করে। অন্য দিনের চেয়ে ঢেউ বেশি ছিল। আগের দশ রোজায় এত মানুষ আসেনি। দুপুরের পরে মানুষের ভিড় আরও বেড়েছে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর দোকানিদের দুর্দিন গেছে দুটি ঈদ। উৎসবের আগে বিধিনিষেধের মধ্যে দোকান সীমিত সময়ের জন্য খোলা হলেও কেনাকাটা সেভাবে জমেনি।
এবার কোনো বিধিনেষেধ নেই, পাশাপাশি অর্থনীতির চাকাও ঘুরছে স্বাভাবিক গতিতে, যেসব প্রতিষ্ঠান বেতন ভাতা কমিয়ে দিয়েছিল, সেগুলোর সিংহভাগই ফিরেছে স্বাভাবিক বেতনে। এতে দুই বছরের মন্দার পর হাসি ফুটতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।
ফ্যাশন হাউজ ‘দর্জি বাড়ি’র একটি স্টোরের ইনচার্জ রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘আগের ১০ দিনের তুলনায় আজকে কাস্টমার বেশি। গত দিনগুলোতে খুবই কম ছিল। আশা করছি দিনদিন কাস্টমার বাড়বে।
‘সকালের দিকটা বৈশাখবরণ অনুষ্ঠানের কারণে কম ছিল। দুইটার পর থেকে ভিড় বাড়ছে। সবাই কিনছেন তা নয়, হয়তো বাইরে গরম বাড়ায় মানুষ শপিংমলে বেশি ঘোরাঘুরি করছেন।’
শাড়ি বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বেচাকেনা অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সাধারণত ইফতারের পরে বেশি হলেও আজকে সকাল থেকেই ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। সপ্তাহের ছুটিতে বেচাকেনা ভালো হয়। আগামী দুই দিন ছুটি থাকায় বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।’
গরমের কারণে এবার সুতির শাড়িতে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা গেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘জামদানি, কাতান আছে, সিল্ক সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে। তবে টাঙ্গাইল সূতির শাড়ি কাস্টমাররা বেশি পছন্দ করছেন।’
ফ্যাশন হাউজ অঞ্জলি শাড়িজের কর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে সুতি শাড়ির চাহিদা বেশি। তবে সবাই কিনছেন এমন নয়, কেউ কেউ দেখছেন।’
বসুন্ধরা শপিংমলে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণির ছাত্র আরাফাত রহমান ইমন। তিনি বলেন, ‘নববর্ষ উদযাপনের পরিকল্পনা থাকলেও রমজান ও বাইরে গরম পড়ায় শপিং করতে এসেছি। বাইরে যে গরম তাতে শপিংমলই সময় কাটানোর জন্য উত্তম স্থান।’
আরেক ক্রেতা পাভেল রহমান বলেন, ‘নোয়াখালী থেকে ঢাকায় চাচার বাসায় এসেছি। ইচ্ছে ছিল বৈশাখের প্রতিটি উৎসবে যোগ দেয়া, মঙ্গলশোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে শপিং করাটাই বেটার মনে হয়েছে।’
বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে শপিংমলে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মৃদুলা খান। তিনি বলেন, ‘আজকে জেন্টস আইটেম বেশি কিনেছি। তবে আমাদের দুই বোনের জন্য ড্রেস কিনেছি। রোজার কারণেই বৈশাখে ঘোরাঘুরি না করে কেনাকাটা করতে এসেছি।’
ফারিয়া খান ও শাহাদত হোসেন দম্পতি জানান, তীব্র গরমে রোজা রেখে ঘোরাঘুরি না করে শপিংয়ে এসেছেন তারা।
ছোট বোনকে নিয়ে কেনাকাটা করতে রোজা আহমেদ। ‘স্টাইল ইকো’তে কথা হয় তাদের সঙ্গে। বলেন, ‘বৈশাখে ঘোরাঘুরি হয়ে ওঠেনি। তাই ঈদের শপিংটা সেরে নিলাম।’
বসুন্ধরা সিটির বেইসমেন্ট থেকে লেভেল ৭ পর্যন্ত সারি সারি দোকান সাজানো মেয়েদের পোশাক, শাড়ি, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, গয়না, চশমা, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, বাচ্চাদের খেলনা, শো-পিস, ছেলেদের পোশাক, গৃহস্থালী সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যে। নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও দেখা গেছে ভিড়। সেখানে বেশিরভাগই ক্রেতেই নারী।
তোফাজ্জল কসমেটিক্স অ্যান্ড গিফট শপের বিক্রয়কর্মী নুসরাত জাহান জানান, প্রসাধন বিক্রি হয় রোজার শেষ দিকে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতা সমাগম বেড়েছে, তবে বিক্রি খুব বেশি বাড়েনি। প্রতিবারই ১৫ রমজানের পরে ভালো কিছু হয়, আশা করা যায় বেচাকেনা আরও বাড়বে।’
শপিংমলের বাইরে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। তবে বিক্রি সন্তোষজনক নয় বলে জানান মাহাদুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘দিনে যে কয়টা কাপড় বিক্রি হইতেচে, তা দিয়া চলত না।’