বরগুনায় অফিস দখল নিয়ে ট্রাকশ্রমিকদের দুই সংগঠন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুটি সংগঠনের শ্রমিকরা শহরের টাউনহলে মুখোমুখি অবস্থান নেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে জেলা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরগুনার টাউনহল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন ও আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিকদের দুটি গ্রুপ কার্যালয় দখল নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
বরগুনা আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রইসুল আলম রিপন। আর বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।
বরগুনা আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য আব্দুল হালিম মোল্লা বলেন, ‘বুধবার গভীর রাতে বরগুনা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত টাউনহল মোড়ে আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের অফিস কার্যালয় ভাঙচুর করে ভেতরের আসবাবপত্র লুট করে।
‘খবর পেয়ে সকালে আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রইসুল আলম রিপনের পক্ষে দুই শতাধিক ট্রাকশ্রমিক টাউনহল চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত রিপনের পক্ষে শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান নিয়ে আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়টি নিজেরা নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন।’
ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রমিক নেতা মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল থেকে বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন বরগুনা জেলা শাখার নামে একটি সংগঠন নিয়ে আসেন। ওই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তিনি আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন অফিস দখলে নেন।
‘পরবর্তী সময়ে তার নেতৃত্বে যুবদল নেতা শাহ আলম, টায়ার রাজু জুলহাস, যুবরাজসহ কয়েকজন বেসিক ট্রেড ইউনিয়নের নামে লোড বড় ট্রাক থেকে এক হাজার, ছোট ট্রাক থেকে ৫০০ এবং ট্রান্সপোর্টের অফিস থেকে এক হাজার করে চাঁদা আদায় করতে থাকেন। এ ছাড়া দুটি ফেরিঘাটে অবৈধ ইজারা দিয়ে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বরগুনায় উৎপাদিত তরমুজ পরিবহনের জন্য ট্রাকভর্তি এক হাজার করে টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আমরা বরগুনার পুলিশ সুপারকে জানালে তিনি বেসিক ট্রেড ইউনিয়নকে অফিস ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন। বুধবার রাতে অফিসের দেয়াল ভেঙে ভেতরের আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা আজকে জড়ো হয়েছেন এবং তারা তাদের অফিস ফেরত পেতে চান।’
বেসিক ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম চাঁদা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে আমার কাছে আসে। আমি শ্রমিকদের স্বার্থে বেসিক ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে শ্রমিকদের সংগঠিত করে চাঁদা থেকে রক্ষা করেছি।
‘তরমুজ পরিবহনের মৌসুম আসায় আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন ফের চাঁদাবাজির প্রস্তুতি নিয়ে রাতে আমাদের অফিস ভেঙে সকাল থেকে সেটি দখলের চেষ্টা করছে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়েছি। এ নিয়ে শ্রমিক নেতা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই মানব।’
বরগুনা আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রইসুল আলম রিপন বলেন, ‘সারা দেশের মতো বরগুনায়ও আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ বেসিক ট্রেড ইউনিয়নের নামে একটি সংগঠন আমাদের কার্যালয় দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। আমরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি এবং তাদের সহায়তায় আমরা আমাদের অফিসে ফিরতে চাই।’
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছি। আশা করি বিষয়টি সমাধান হবে।’