২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ব্যবসায়ী শিবু দাসকে প্রথমে অপহরণ, পরে ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় গাড়িচালক মিরাজকেও।
কে বা কারা এবং কেন অপহরণ করে মুক্তিপণ চেয়ে বস্তাবন্দি করে ফেলে গেল? এমন অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পটুয়াখালীতে ঘটা এ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ।
অপহৃতদের উদ্ধারের পর বুধবার দুপুরে শিবু দাসের ছোট ছেলে বাসু দেস দাস অজ্ঞাতপরিচয়ে কয়েকজনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন।
বুধবার বিকেলে পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের আদালতে হাজির হয়ে শিবু লাল দাস স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’
এসআই নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি, তদন্ত করছি। কে বা কারা এবং কেন তাকে অপহরণ করল সে বিষয়টিকে বেশি প্রধান্য দেয়া হচ্ছে। কান টানলে এমনিতেই মাথা বেরিয়ে আসবে।
এ দিকে ২৪ ঘণ্টার পর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘এ ঘটনার ক্লু বের করার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
কী বলা হয়েছে এজাহারে
মামলার এজাহারে বলা হয়, শিবু ব্যবসায়িক কাজে গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরানবাজারের নিজ বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার গাড়িচালক মিরাজ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কাজ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তারা হরিদেবপুর খেয়াঘাটের পাশে তাদের মালিকানাধীন শোভা আবাসিক বোর্ডিংয়ে বিশ্রাম নেন।
এরপর তারা আবার বাসার দিকে যাওয়া শুরু করেন। এর মাঝে আমখোলা বাজারে করিম হাওলাদারের কাছ থেকে গজালিয়া খেয়াঘাটের কালেকশন বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং হরিদেবপুর খেয়াঘাটের ম্যানেজার শ্রী শ্যামলের কাছ থেকে ৫২ হাজার ১২০ টাকা নেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এক পর্যায়ে তার বাবাকে খুঁজে না পেয়ে রাত ১টা ৫৯ মিনিটের সময় তার বাবার নম্বর থেকে মায়ের ফোনে কল আসে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার বাবাকে জীবিত অবস্থায় ফেরত পেতে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য বলা হয়। যদি প্রশাসনকে জানানো হয় তাহলে তার বাবাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
উপায় না পেয়ে বিষয়টি রাতেই পুলিশকে অবহিত করা হয় এবং সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। পরে পুলিশ আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া এলাকার রহমানিয়া তেলের পাম্প থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবসায়ীর প্রাডো গাড়িটি উদ্ধার করে।
বাসু দেব মামলায়ে উল্লেখ করেন, দিনভর খোঁজাখুঁজি এবং পুলিশি অভিযান পরিচালনার পরও তার বাবা এবং গাড়িচালকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সবুজবাগ এলাকার গোলাম সরোয়ার বাদলের মালিকানাধীন এসপি কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বস্তাবন্দি তার বাবা ও চালককে উদ্ধার করা হয়।
এ সময় তাদের হাত, পা, মুখ কাপড়, রশি, স্টচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। পরে তাদের পটুয়াখালী মেডিক্যালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়।
অপরহরণকারীদের দেখলে চিনতে পারবেন বলেও মামলার শেষে উল্লেখ করেন শিবু দাসের ছেলে বাসুদেব দাস।