আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। দলটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে নিয়ে আরেকটি জোট গঠন করতে চায়।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ১৪ দলে না থাকার বিষয়ে রেজুলেশন পাস করেছে। ২৮ মার্চ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এখন থেকে বাংলাদেশ জাসদ আর ১৪ দলের শরিক নয়।’
১৪ দলে না থাকার সিদ্ধান্তের কথা জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে জানানো হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘সেটার প্রয়োজন মনে করছি না।’
যে রেজুলেশনে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয় তাতে বলা হয়েছে, ‘১৪ দল এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এখন কলঙ্কিত জাতীয় নির্বাচন ও সরকারের কর্তৃত্বপরায়ণ ভূমিকার সাফাইকারী হিসেবে ১৪ দলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে গা মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার রাজনীতির এক দুঃখজনক খেলায় ১৪ দলকে ভাগিদার করা হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে ১৪ দলকে একটি কার্যকর যুক্তফ্রন্ট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত আগ্রহ দেখালেও এরপর কখনই সে চেষ্টা দেখা যায়নি।’
আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলা হয়েছে, ‘জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১৪ দলকে কার্যকর করার জন্য কখনও শাসক দল আগ্রহ দেখায়নি। সরকারের নীতিনির্ধারক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের মতো কোনো কাজেই ১৪ দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেয়ার রীতি চালু হয়নি।
‘আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনও কখনও ১৪ দলের সিলমোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। বৃহত্তর দলের তোষামোদী ও চাটুকারীতার এক জঘন্য সংস্কৃতি চালু হয়েছে ১৪ দলে। এহেন পরিস্থিতিতে নিজস্ব রাজনৈতিক-সাংগঠনিক মর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ জাসদ ১৪ দল বা অন্য কোনো জোটে অংশ নেবে না।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দলীয় জোট মিলে এই জোট গঠিত হয়।
কিন্তু জোট গঠনের পর পরই ১১ দল থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। তার পরও জোটটি ১৪ দল নামেই পরিচিত।
২০০৭ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম জোটটি ত্যাগ করে। পরের বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল এতে যোগ দিয়ে মহাজোট নামে নির্বাচনে অংশ নেয়।
২০১৬ সালের ৯ মার্চ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে বেরিয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি অংশ বাংলাদেশ জাসদ নামে আরেকটি দল গঠন করে। যদিও এখন পর্যন্ত এ দলটি রেজিট্রেশন পায়নি।