বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চুরি হওয়া রিজার্ভ ফেরতে শুরুতেই হোঁচট

  •    
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ২২:০৮

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতে মামলা করায় বিলম্ব এবং মামলার স্থান নির্বাচনে ভুল ছিল বলে মনে করেন এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘যখনই কিছু বলা হয় তখনই ফিলিপাইন থেকে জানানো হয়- বাংলাদেশের মন্ত্রীই তো স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই চুরির সঙ্গে জড়িত। ওই কারণে মামলায় হেরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপেই হোঁচট খেল বাংলাদেশ।

অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালত খারিজ করে দিয়েছে বলে মঙ্গলবার খবর প্রকাশ করে ফিলিপাইনভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল না। মামলা খারিজ সংক্রান্ত খবরটি দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তথ্য উদ্‌ঘাটন ও করণীয় নিয়ে বুধবার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় বৈঠক করে। পরে জানানো হয় যে মামলাটি খারিজ নয়, অভিযুক্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থ ফিরে পেতে মামলায় লড়ে যাবে বাংলাদেশ।

তবে মামলা থেকে দুটি ক্যাসিনোকে অব্যাহতি দেয়ার খবরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার পথে এটি হোঁচট খাওয়ার মতো বার্তা।

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে মামলা করায় বিলম্ব এবং মামলা করার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনে ভুল ছিল বলে মনে করেন এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, মামলাটি ফিলিপাইনে করা উচিত ছিল। ফিলিপাইন পার্টির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে নিউ ইয়র্কে। ‌এটা ঠিক হয়নি।

ড. ফরাসউদ্দিন বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেন ফিলিপাইনে মামলা করতে পারলাম না? কারণ আমাদের কর্তারা বলে দিয়েছেন, রিজার্ভ চুরি তো বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকেরাই করেছে। এরপর আমরা দুর্বল হয়ে যাই।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ফিলিপাইনের গণমাধ্যম তখন রিপোর্ট করে যে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী বলেছেন, চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকই জড়িত। যখনই কিছু বলা হয় তখনই ফিলিপাইন থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের মন্ত্রীই তো স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সঙ্গে জড়িত। ওই কারণে মামলায় জয়ী হওয়া কঠিন হবে। হেরে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি চুরির ঘটনা ঘটে। টাকাটা ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে ছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি টাকা ক্যাসিনোতে চলে যায়। এর মধ্যে শক্ত প্রতিবাদ করা গেলে টাকা পাওয়া যেত। মামলা দেরিতে করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো জাজমেন্ট দেয়া হয়নি। কিভাবে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার হবে সে বিষয়েও কিছু বলেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। নিউ ইয়র্কের আদালত দুটি প্রতিষ্ঠানকে কেন অব্যাহতি দিয়েছে সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেখতে হবে। কারণ, এর ধারাবাহিকতায় অন্যরাও তো অব্যাহতি চাইতে পারে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যে বা যারা এই রিজার্ভ চুরির পেছনে আছে সেটার প্রতিবেদন এখনো দেয়নি। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ড. ফরাসউদ্দিনের কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এগুলো দ্রুত বিচার করা দরকার।’

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফ্‌ট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। রিজার্ভ রাখা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে। এই অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে গেলে সেই অর্থ দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়।

চুরির পর বিভিন্ন সময়ে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আসে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্ত করতে ওই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি ২০ মার্চ কাজ শুরু করে। একই বছরের ৩০ মে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে কমিটি। কিন্তু সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

রিজার্ভ চুরির দীর্ঘ চার বছর পর ২০২০ সালে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের জন্য নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মামলায় সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্ট কর্প, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্প (আরসিবিসি) এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়।

মামলা করার দুই বছর পর চলতি বছরের ৮ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে ‘এখতিয়ার না থাকার’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে বলে ফিলিপাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে মঙ্গলবার খবর প্রকাশ করা হয়।

বলা হয়, ফিলিপাইনের সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো এবং ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবেরি রিসোর্টস করপোরেশন মামলাটি খারিজ হওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে অন্য কোনো সূত্রে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

তবে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, মামলাটি খারিজ নয়, অভিযুক্ত ১৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর