মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর কমে যাওয়ায় সারা বছর তেমন একটা বিক্রি হয় না। করোনার কারণে গত দুই বছর বড় পরিসরে পয়লা বৈশাখ পালন না হলেও এবার হচ্ছে।
সে কারণে পয়লা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্জের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের।
সরেজমিন উল্লাপাড়া উপজেলার নেওয়ারগাছা নন্দীগাঁতী গ্রামের পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, দুর্গাপূজা ছাড়া সারা বছর তেমন কাজের চাপ না থাকলেও পয়লা বৈশাখ ও ঈদকে ঘিরে দম ফেলার ফুরসত থাকে না মৃৎশিল্পীদের।
দেখা গেছে, কেউ কেউ মাটি প্রস্তুত করছেন, কেউবা মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস বানাচ্ছেন। কেউ কেউ মাটির তৈরি জিনিসপত্রগুলো রোদে শুকানোর পর ভাটায় তা পোড়াচ্ছেন। মাটি তৈরি থেকে শুরু করে মাটির তৈরি জিনিসগুলো সরবরাহ করা পর্যন্ত সব প্রক্রিয়ায় নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করছেন।
একসময় নেওয়ারগাছা নন্দীগাঁতী গ্রামের পালপাড়ায় প্রায় ২০০ পরিবারের হাজারখানেক নারী-পুরুষ এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। মাটির জিনিসপত্র আগের মতো ব্যবহার না হওয়ায় অনেকে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অনেকে ঐতিহ্যের কথা ভেবে এখনও ধরে রেখেছেন।
এই পালপাড়ায় ৩০ পরিবারের প্রায় দেড় শ নারী-পুরুষ এ পেশায় নিয়োজিত।
নেওয়ারগাছা নন্দীগাঁতী গ্রামের পালপাড়ার সত্তরোর্ধ্ব নারী মৃৎশিল্পী ফরিদাসী পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসময় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের খুব কদর ছিল। সে সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বাইরে থেকে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হতো। এখন মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর অনেক কমে গেছে। বাপ-দাদা ও স্বামীর পেশা হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে এ পেশা এখনও ধরে রেখেছি।’
একই এলাকার সঞ্জয় কুমার পাল বলেন, ‘মাটি থেকে শুরু করে জ্বালানির দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় জিনিসপত্রের দাম খুব একটা বাড়েনি। দুর্গাপূজার পরই পয়লা বৈশাখ ও ঈদে বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় মাটির তৈরি জিনিস বেশি বিক্রি হয়।
‘বাড়ির সব সদস্য শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিমা ছাড়া ১০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় শ টাকা পর্যন্ত মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে থাকি।’
লক্ষীরানী পাল বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের এখানে পাইকাররা মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে আসেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আমরাও বিভিন্ন মেলায় ও ফেরি করে বিক্রি করি। তবে আমাদের এই শিল্পের প্রতি সরকারের কোনো নজর নেই। পাই না কোনো সুযোগ-সুবিধা। রমজান হলেও আশা করছি এ বছর ভালো বিক্রি হবে।’