দেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব প্রকল্প মানুষের জীবনকে পাল্টে দেবে, অর্থনীতিকে করবে গতিশীল।
সরকারপ্রধান আরও জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো ঋণ নেয়া হয়নি। অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নেয়া দেশি-বিদেশি ঋণ বোঝা হবে না।
১৪২৮ সালের সূর্য শেষবারের মতো অস্ত যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রচার হওয়া জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা ছেড়ে উদার জীবনব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও জানান। নতুন বছর থেকে এই প্রেরণা দিতে চান তিনি।
বৈশাখ নিয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি জোগায়, স্বপ্ন দেখায়।’
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বানও জানান তিনি।
সরকারপ্রধান এ বিষয়টির পাশাপাশি দেশের নেয়া নানা মেগা প্রকল্পে অগ্রগতির কথাও জানান।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেকেই নানা কথা বলছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির বিপর্যয়ের পেছনে অন্য নানা কারণের পাশাপাশি দেশটির নানা মেগা প্রকল্পও দায়ী বলে অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
দেশটি বিদেশি ঋণে বেশ কিছু উচ্চাভিলাসী প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেগুলো বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারত। কিন্তু করোনার কারণে পর্যটননির্ভর দেশটি গত দুই বছরে এ খাত থেকে বলতে গেলে কোনো আয় করতে পারেনি। এটি দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণের একটি।
বাংলাদেশেও সমালোচকরা দাবি করছেন, সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের জন্য চাপ তৈরি করবে। যাদিও শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ খুবই কম।
আবার এমন কথাও ছড়ানো হচ্ছে যে, পদ্মা সেতু সরকার নিজের অর্থে তৈরির দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে চীন থেকে নেয়া ঋণে তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। কোনো ঋণ নেয়া হয়নি।’
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল প্রকল্প, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়।
এক যুগ পর এসব প্রকল্প ধীরে ধীরে চালু হওয়ার অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘আর কয়েক মাস পরই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এ বছরের শেষ দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু করার কথা আরও একবার জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’
১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ দিকে চালু হবে বলেও আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা জানান, এসব প্রকল্প নেয়ার আগে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অর্থনৈতিক সমীক্ষা করা হয়েছে। বলেন, ‘শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তিবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।’
বিদেশ থেকে ঋণ নিলেও তা যেন দেশের বোঝা না হয়, সেদিকেও নজর আছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।’
২০২২ এবং ২০২৩ সালকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের মাইলফলকের বছর বলেও অভিহিত করেন শেখ হাসিনা।
তার টানা তিন শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে, তা অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়।
‘২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।’